সেলাই







বচন নকরেক এর দীর্ঘতম কবিতা

সেলাই

বিভোর ঘুমের ভিতর হাঁটছি বারান্দায় চশমা পরা সিগারেট ;হাঁটছে সেও আজকাল কী-সব স্বপন দেখি খোলস ছাড়ি সাপের মতো, ঘুরি গুহায় গুহায় ল্যান্ডস্কেপ কাগজে প্রিন্ট হ'য়ে বেরই মাংস মাখা ফটো হ'য়ে
সুউচ্চ চার্চের চূড়ায় শকুন হ'য়ে বসে থাকি পাপীতাপী কত মানুষ কাঁদতে কাঁদতে ফিরে যায় পাপের ক্ষমা নিতে এসে—
হঠাৎ ক'রে জল হ'য়ে গড়িয়ে নিচে পড়ে যাচ্ছি হিমালয় থেকে মিশে যাচ্ছি মলমূত্রের ডোবা নালার জলে
মরে গিয়ে নিজের কবর খুরি পিপড়ার আক্রমণ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে উড়ি
পোকামাকড়ের ভিড় ঠেলে সামনে এসে দাঁড়াই, শ্লোগান ছাড়ছি মাইকে মুখ ছাড়াই
এত পানি! বলি কেন? ভাগ পানি ভাগ নুড়ি -মাটি ভুলে যাই যেন---
প্রযুক্তির বদৌলতে আমি এক জন্ম থেকে আরেক জন্মে যাতায়াত করছি এক সভ্যতা থেকে আরেক সভ্যতায়
মন চাইলেই ঢুকে পড়ছি ঈশ্বরের গুহায়
আমার সেকাল একাল নিয়ে কখনো হেঁটে যাই বক্র আইল ধরে সরষে খেতের ঘুম ভাঙিয়ে পুরনো ঘর সংসারে ঢুঁ মেরে চুপচাপ ফিরে আসি চোখ মুছতে মুছতে
খোলস বদলে ইঁদুরের গর্তে আবার মুখোশ পরা মানুষ
অধুনা ডিভাইসের স্ক্রিনে প্রজাপতির ডানা জেগে ওঠা চরে সবুজ মাঠ বিদায়ি সূর্যের পশ্চিম দিগন্তে টুংটাং রঙিন বাজনা
এভাবে ক্রম ঘূর্ণায়মান থেকে বয়স হ'য়ে গেছে আমার অজস্র বছর
নিজের মুত নিজেই খেয়ে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করছে এক নারী।
৭১' এর শিশুরা কেউ হয়েছে জঙ্গি কেউ যীশু!
নিজের ঘরে আগুন জ্বলছে অথচ, অন্যের ঘরের আগুন নিয়ে কত হাঁক ডাক-
একবার, ঝালমুড়ির পরিত্যক্ত টুঙ্গায় মুড়ি খেতে ঢোকে আর বেরুতে পারিনি -- ডাস্টবিনে আটকা পড়েছিলাম ১০০০ ঘণ্টা তারপর, ময়লা পোড়া আগুনে ধোঁয়া হ'য়ে আকাশে ঝুলে র'লাম ৪৭ বছর
তোমাত বুকে হাত রাখতেই ক্লিক ক্লিক শব্দে ওপেন হচ্ছে, ভিন্ন ভিন্ন পৃথিবী হাজার পৃষ্ঠার রঙিন কাগজ
জলে খেলতে খেলতে খেলতে খেলতে কখন হাঁস হ'য়ে গ্যাছি আমাকে খোঁজে পায়না হাঁস পুকুরের কবি...
সেই জিভ পোড়া জব্দ কুকুর সদ্য পুড়া মাংস পিণ্ড ভেবে জ্বলন্ত কয়লায় দাঁত বসিয়েছিলাম, সেই গোপন অপমান নিয়ে এখনো বেঁচে আছি দগ্ধ ক্ষত জিভে...
হরিণবাহী ভার্চুয়াল নৌকো তরঙ্গময় বাতাসে সাঁতরে আসছে বৈঠা মারার শব্দ অথৈ ইথারে নতুন ফোল্ডার তৈরি করি শয্যা ঘুমের আয়োজন রৌদ্রসেবন শেষে-
ভাঙা নৌকোর টুকরো কাঠ খণ্ডে ভেসে যাচ্ছি কোথায়, কোন নতুন জন্মে ----!
ঈশ্বরের চেয়েও মানুষের মারপ্যাঁচ ভয়ঙ্কর হয় খুব কাঁদায়, ব্যথা দেয়__
নিখোঁজ নিজেকে খুঁজতে জন্মগ্রামে যাই আমাকে দেখে সবাই বললো- এই তো তুমি ----- কিন্তু, ১০০০ বছর পরে!
কম্প্যুটারের গুহায় মাকড়সার জালে আটকে শুটকি হ'য়ে ঝুলে আছি ১২ বছর অথচ --------- বচন নকরেকের খোঁজে কেউ করলো না, সাধারণ ডাইরিটুকুও এতো টাই ফেলনা আমি!!
ইঞ্চি অন্তর্ঘাতী ছুরি কাটছে আমার ৩০০ বছরের কচ্ছপ আয়ু
কবরে পড়ে থাকা নিজের হাড়গোড় কাঁধে করে নিয়ে যাচ্ছি বাড়ি কে আছে বাড়ি? কত বছর পর ফিরছি বাড়ি!
আন্তর্জালে একটি নদী সুশীতল বাতাস বইয়ে দিয়ে চলে যাচ্ছিলো - আমি সেই নদীর পাড়েই তোমার হাত ধরে বসে থাকতে চেয়েছিলাম! স্কাইপে কল করলাম বার ধরলে না------
সেলফোন আজকাল এতোটাই আপনজন যে, দিন শুরু করি না এই অতি জরুরি ডিভাইসের শলাপরামর্শ ছাড়া - যদিও, থাকতে পারিনা প্রিয়ে তোমার সান্নিধ্য ছাড়া
আমার ক্ষণজন্মা শরীরের দেয়ালের পলেস্তারা, ইট সুরকি নুড়ি ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে প্রিয় ভবন ধসে গেলে চাপা পড়বে ৩-৪ টে মশা
আমি আমার শরীর তথা মাটির গাছকে দ্যাখতে পাচ্ছি - কিন্তু, আমার মাটির গাছটা আমাকে দ্যাখতে পাচ্ছেনা...
মাটির চামড়া থেকে প্রতিদিনি গলে পড়ে যায় ঘাম মিশ্রিত ধুলো
ঘোড়ায় চড়তে পারো? আমার ভার্চুয়াল ঘোড়ায় তোলে তোমাকে নিয়ে যাবো সাত সমুদ্র তেরো নদীর ওপাড়ে... মেঘে থুৎনি রেখে টানবো চে'-র রেখে যাওয়া হাভানা চুরুট
আমার কবিতার খামার আছে তারপরেও আরো করবো কবিতার আড়ত! জায়গা হচ্ছে না খামারে না হলে যে, রোজ গুঁত্তাগাঁত্তা বেড়ে যাবে শব্দে শব্দে- বেড়ে যাবে রক্তারক্তি!!
নিজের শব পুড়ার ছাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিয়ে গেলাম ফেসবুকের ময়দানে
বাঁশ মাচাঙের নিচে আগুন জ্বালিয়ে উপরে শোয়ে কিছুক্ষণ থাকো আর অনুভব করো নরক যন্ত্রণা কেমন!!
আমার কবরে নিয়ে যাচ্ছি তোমার কাঠখোদাই মুখ!
মনে হচ্ছে -------সুচির পিঠে বন্দুকের নল ঠেকানো। যা বলতে বলা হচ্ছে, তাই বলছে। পুতুল নবাব। কালপ্রিট ----সেনাবাহিনী প্রধান।
মরে যাবার পর প্রিয় মাটির কোটটা আর পরতে পারবোনা-
আমি সিগারেট হতে চাই জ্বললে আগুন- না জ্বললে ছাই!
জন্মের দিন গিফট পাওয়া মা-বাবার পোশাক পরেই এখনো আছি; যেদিন চ’লে যাবো---সেসব খুলে রেখেই যাবো----
বৃটিশদের রেখে যাওয়া সিগারেটের ছাইয়ের আগুনে তাপে এখনো পুড়ে যায় অসহায় প্রান্তিক জনপদ -- পাদদেশ
আমি আগুন থেকে জন্ম নিয়ে আগুন হব পুড়িয়ে ছাই করে দেব ১০১ বাড়ি ঘর
আমার মতো হতাশ মানুষেরা পুড়ে শেষ হবার পরেও আঙুল থেকে ফেলে দিতে ভুলে যায়, সিগারেটের ফুটকি
শরীরটা শুইয়ে রেখে, নিজের কাটাছেঁড়া শরীর নিজেই সেলাই করছি। কোন এক জন্মে আমি কী দর্জি ছিলাম?
আমার কিছুই নেই তা জানার পর, টুইটারে দেখা হওয়া পরি আর ফোন করে না
মরে যাবার পর, মৃত মানুষের আত্মা নাকি প্রবল আনন্দ পায়; ঠিক, ২০ বছর পর জেলখানা থেকে ছাড়া পাওয়া কয়েদির আনন্দের মতো। মানুষের শরীর নাকি একটা হাজতখানা!!
সেলাই করে বন্ধ করা যায়না ক্ষুধার্ত মানুষের মুখ!
আজকাল ছুঁচের কাজ শিখছি নিজের ছিঁড়াখোঁড়া শরীর সেলাই করবো ব'লে শরীর জুড়ে জখমের দাগ, ফেটে চৌচির
আয়নার ভেতর কখন ঢুকে পড়েছি, আমাকেই আয়না ভেবে মুচ পাকাচ্ছে আয়নার ভেতরে থাকা আমি
মরে ভূত হলে সেলাই করে রাখা নিজের কঙ্কাল খুলে পুড়িয়ে আগুন পোহাবো!
পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু গাছটিতে চড়ে তোমার জন্যে একটিও love টুইট করা হলো না
আমাকে কুপিয়ে জখম করা ঘাড়ের রক্তস্রোতের সাথে বের হয়ে এলাম অন্ধকার---------বন্দিঘর থেকে
একটি বাচ্চা ভূত, রোজ মাঝরাতে ওর ছোট্ট হাত দিয়ে, মাথায় হাত লাগিয়ে আমায় ভয় দেখায়- আমিও ভয় পাবার ভানকরি যাতে সে আনন্দ পায়
আমি নিজের জন্য আরো ১টি শরীর সেলাই করছি
পাখির গু থেকে জন্ম নেয়া বটবৃক্ষটা বাড়াচ্ছে পরিত্যক্ত বাড়ির শোভা
আমার ----আমি থেকে প্রজাপতিতে কনভার্ট হতে খুব ইচ্ছে করছে দে না ----এমনতর একটা অ্যাপ বানিয়ে!
নিজের নাম ভুলে গিয়ে অন্যের দেয়া নামেই ভুল জনম পার করছি এই ভুল গ্রহে
একবার জুতো না খুলেই ঢোকে পড়েছিলাম পবিত্র মন্দিরে
আয়নায় দাঁড়ালাম কিন্তু, আমার প্রতিচ্ছায়া আমাকে চিনেনা ---- বলে, এ- কে তুমি!
সামনে শীত। তোমার জন্য জামদানি বুনতে বুনতে ফুরোলো গোটা গরমকাল
জিশুখ্রিস্ট-র কষ্ট বোঝার জন্য আমাকে বেঁধে মনকাঁটার ডালে ঝুলিয়ে রাখতে বললে ওরা তাই করলো-
ভার্চুয়াল সড়কে ট্রাফিক জেম পিরিতি বোঝাই ট্রাক সারি সারি-
নিজের কফিনের উপর চড়ে বসে আছি!
আততায়ীর সাথে অনেক ধস্তাধস্তির পর শেষ পর্যন্ত র'য়ে গেলাম।
ফ্রিজে বরফগলার শব্দ নিচে ভারি বুটজুতো পরে পায়চারি করছে ৭০ ডিভিশনের চামচিকে
পথে কুড়িয়ে পেলাম রুমালে মোড়ানো ঠোঁট
গুলতির গুলিতে ফুটো ক'রে দেবো ছলনাময়ী চাঁদের স্তন
মানুষ শখ ক'রে উঁচা পাহাড়ে ওঠে আবার ঢাল বেয়ে নিচেই নামে
মরে যাবার পরও অশরীরী আমি তোমার অপেক্ষায় ছিলাম ৩০ বছর! জানলায় দাঁড়িয়ে, সিঁড়িতে বসে, সিলিঙে ঘুমিয়ে, খাটের নিচে শোয়ে
মাঝেমাঝে নিজেকে চিনতে পারছি না। আয়নায় দাঁড়ালে মনে হয়- এ মুখ আমার নয়।
গিঁট খোলা। ইচ্ছে করলে নিয়ে যাও আমার শরীরে বাঁধা তোমার হাত-পা, নাভিকমল, কোমল গাল, স্তন
খরানে ফেটে চৌচির খেতের উপর মুতে দিচ্ছি বৃষ্টির জন্য হাহাকার করা ফাটা মাটির ফাঁকে ঢুকে থাকা ব্যাঙেরা ভাবুক বৃষ্টি হচ্ছে, বর্ষা এসে গেছে
বেশিদিন থাকবো না, চলে যাবো-----
নিজেকে ঠকাচ্ছি। ঔষধের বদলে সিগারেট কিনে!
আড়ালে দাঁড়িয়ে দ্যাখছিলাম, গীতার হেরে যাওয়া মুখ!
তাপ্পি মারা ছাতা মাথায়-না ফেরানো যায় বৃষ্টি, না রৌদ্রতেজ!
বিরহপীড়িত মানুষের বুকে জ্বলা আগুনের কষ্ট বুঝতে নিজের আঙুল পুড়ে দিলাম; জ্বলন্ত সিগারেটের আগুনে।
মানুষের টাকা লুট ক’রে নিয়ে ওরা বানাচ্ছে মানুষ মারার কল
আমার ভেতরেও আছে, সুইসাইডের ঝোঁক
একবার ভেবেছিলাম, বনৌষধির কারবারটা শুরু করবো... কিন্তু, গাছগাছালি চিনতে চিনতেই ফুরিয়ে যাবে আমার ৩জন্মের আয়ু ---
একলক্ষ আলোকবর্ষ বেগে মন আমার ছুটোছুটি করছে-
বাইরে বেরুবার আগে ক্লিন শেভ করে নিই চুল আঁচড়িয়ে সেজেগুজে নিই আয়নায় তাকিয়ে ভালো ক'রে নিজের মুখ দেখে নিই [কেশে -------হেসে] বলা তো যায় না, হতে পারে- আজই আমার শেষ দিন
=+=

No comments:

Post a Comment