৩০ টি সনেটগুচ্ছ -বচন নকরেক

বচন নকরেক

একগুচ্ছ সনেট -বচন নকরেক
.

অলৌকিক নৌকো 
.
মাছ নেই বরফ আছে; হৃদয়হীন ভালোলাগা
উদাসী রাখালেরা ধানের খেতে চড়ায় কবির
নীল গাই
নীলগিরি বাগানে  দিকবিদিকহারা
মন
সময়ের চতুরদোলায়  চেপে  অলৌকিক
দুর্দান্ত নৌকো পার ক’রে যায় হাহাকার সমুদ্র-
আলস্যমাখা দুপুরে বিষন্নতা ছোটে আসে চুপে
নিঝুম নীলগিরি গাছে ওঁত পেতে থাকে পাপাত্মা
ময়ূরপঙ্খী  শাল বুকে   বিঁধে আছে কালের কাঁটা
হসপিটালের নার্স-কোয়ার্টারে হিংস্র দেবি রূপে
কখনও বিশ্রী হোরর_ মুভির নায়িকার মতো!
মাছ নেই বরফ আছে
; হৃদয়হীন ভালোলাগা
পথিক পথহারা- যা ভাবে তাই বলে! রসাতলে
যাক সব বাঁশ মুথা জ্বলা চুলোর নষ্ট ধুলোয়
বন্ধু, পুরস্কার, সম্মান ফেলে দিই ময়লা জলে_


০৮.০৬.১৯

হারানো চিঠি খুঁজেছি অনেক

হারানো চিঠি খুঁজেছি অনেক, জংলী হ্লুদ খেতে
হারানো চিঠি খোঁজেনি আমায়, আমায় ফিরে পেতে

রবারের বনে বন্য শুকর ঘুরে, শিল্পেরি খোঁজে
হয়তো বেহুদাই হয়তো মহৎ কাজে __সবাই
কী তা বোঝে! হারানো চিঠি খুঁজেছি অনেক_সহজে
পাইনি খোঁজে! আদর মাখা-মায়াভরা খাল পাড়
জারুল ফুলের মালা পরে কেটেছি কত সাঁতার
খোঁজতে গেলেই দিনগুলো পালিয়ে লুকিয়ে পড়ে
গভীর হলুদ বনেআম কাঠালের কষ্মেখে
পাড়ায় পাড়ায় ঘোরা, হয়ে উন্মাতাল-লক্ষীছাড়া
বনবাদারে জীবন ছিলো তালকানা হতচ্ছাড়া!
মদ মাতাল বারান্দাটি রইলো একাই ঘুমিয়ে_
হারানো চিঠি খুঁজেছি অনেক, জংলী হ্লুদ খেতে
হারানো চিঠি খোঁজেনি আমায়, আমায় ফিরে পেতে

.
০৯.০৬.১৯

ইটকাঠের জীবন
.
ইটকাঠের জীবন ভরা পানাপুকুরে-পিঁপড়ে
টিলার ধারে গজারি বন, কে আসে রাতদুপুরে?
বৃষ্টি-পীড়িত পাহাড়চূড়া, অস্থির হরিণ ধরা
দূরে স্রোতের খেলা, স্মৃতির গুঞ্জন, ঝরনা-ছড়া
লামা পাহাড়, মন্থর মেঘ ছুঁয়ে উড়ছে ফানুস
চমকপ্রদ দিনগুলিকষ্টভোলানো ভাঁটফুল
মনে করলে মনে পড়ে, বাঁশ-কাঠের সাঁকো নড়ে
নাচঘরে বাসরঘরী নাচ, হৃদয়পুর কাঁপে
বিদ্যুত রেখায় ছিঁড়ে পড়ে যায় মেঘের কামিজ
স্বপ্নের ভিতরে বাড়ি, জেগে আছে_পুরষ শিরিষ
মনে মনে কতকিছু, অভিলাষী আকাশকুসুম
দূরে স্রোতের খেলা
, স্মৃতির গুঞ্জন, ঝরনা-ছড়া
বন্দুকযুদ্ধে ওলোটপালোট, ছারখার  রেস্তোরাঁ
ইটকাঠের জীবন
গর্জে ওঠে কার অভিশাপে-
.
০৯.০৬.১৯
.
জ্বলছে ফতুয়ার বোতাম
.
যে আর নেই
, সে আর নেই; অথচ তাকেই ডেকে
কাঁদে অন্ধকারে কবি ক্ষ্যাপাটে সন্ধ্যায় কলরব
করে  বৃষ্টি-পীড়িত পাখি, গলায় ঢালে কবিতার
গ্লাস! দুঃখদায়ক দূরস্মৃত মুখ দ্যাখছে জলে
নিজ ছায়া, ঠোঁটে পুরে নেয় কুড়িয়ে পাওয়া আগুন
জ্বলছে কবিতা , ফতুয়ার বোতাম, শিমের মাচা-
কোন গুহার ভেতর রাজা সলোমনের চাবুক,
ঘোড়া? পাতালেও নেই, আসমানেও নেই পরীরা
আমরা তবু খুঁজি, যে নেই তাকে খুঁজতেই কেউ
কেউ মরে যায়__ খোঁজতে যেয়ে সেও আর ফিরে না
ফিরে এসে নিম কাঠের চৌকিতে হয় না তো শোয়া
যে আর নেই, সে আর নেই; অথচ তাকেই খুঁজি
বহেরাতলায়, দোখলায়, চায়ের দোকানে, নেটে
.
বুকের গহীনের কলতলা কোথায় খুঁজে পাবো…?
.
১০.০৬.১৯ 
.
পাহাড়-টিলায় জীবন
.
.ইঁদুরের মতো গর্ত খুঁড়ে গুহায় গুহায় মুখ
লুকাই। পাতে শুটকি-মাছ, জঙ্গলের কচু শাক
বনে বনে ঘুরি, রোদ-মেঘ, আবেগ ছোঁয়া বৈশাক
দৃশ্যপটে তোমাকে টেনে আনি
, কুয়োতলায় বুক
ভাসিয়ে  সাঁতার কাটছো, কেউ দ্যাখছে না _আড়ালে
আমার বাড়ানো হাত! সুগোল মুখ, গভীর চোখে
উপরে তাকাচ্ছো, অধরে ঝরছে জল, ভেজা বুকে
ওড়না নেই! কেঁপে ওঠে  শালিক, আবিষ্ট  অনলে-

জল টলমল হাওর-বিল , ব্যাঙ-চিংড়ির লাফ
দুঃখ জমে থাকে পদ্মপাতায়, দুঃখমোচন চেয়ে
পাহাড়-টিলায় জীবন, আলোআঁধারি ধ্বংস খেলা
সাদা-কালো-হলুদ  সাতপাঁচ ভেবে কী আছে লাভ?
রূপোর মোহর সোনার মোহর মুঠো ভরে পেয়ে

দ্যাখো, গ্রহ রুপী পৃথিবীটাই স্বর্গ-মর্তের ভেলা-
.
১১.০৬.১৯
.
বনচারী  
.
এখানে ঝাউবন দেবদারুবীথি না থাক, আছে
নিবিড় শালবন। উদাস চৈত্র দিনের পাতায়
বাজে শুকনো পাতার মরমরে কোরাস সঙ্গীত !
গুলতি, ছুরি নিয়ে পাখির বাসা খুঁজতে বেরোয়
স্কুল পালানো শৈশব। গামার কাঠের উল্কি আঁকা
পীড়ি, মৌন শিল্পরুচি- থেকে থেকে ভাবাচ্ছে আমায় ;
কে যেন বুনে রেখে গেছে ছনের বন
হরিণের
পায়ের ছাপ গোনে  শিকারিরা ঘুরছে বাগানের
বাঁকে বাঁকে __দৌড়ে পার হচ্ছে খালের সাঁকো
- জ্যোৎস্নায়...
বাঁশঝাড় খোঁপা-খুলে মাথা দোলায় বৃষ্টি
-মুখর
আষাঢ়ে অন্ধকারে_ কেউ দ্যাখে না শুধু কবি দ্যাখে
জ্যোৎস্না পোড়া মুখে গাছে গাছে উড়ে ভূত-প্রেত-পরী
 না থাক ময়ূরপঙ্খি
, মন আমার চিরহরিৎ
উল্কি এঁকে রেখে যাবো, আগচি-গামারি গাছে গাছে___
.
১২.০৬.১৯
.
শাল বৃক্ষের ছাল ছিঁড়ে
.
সেই সুবর্ণ রেখায়, বিন্দু বিন্দু কষ্ট জমা স্মৃতি
ভাইরাস আক্রান্ত ফোল্ডারে ভার্চুয়াল ভালোবাসা
নিভৃতচারী স্বপ্নভ্রষ্টা, শব্দ  খেলা আমার নেশা
শুঁড়
নাড়া আনারস, কাঁঠাল আছে দুই একটি!
আন্তর্জালের দুঃখবিলাস, অহংকার জারিজুরি
পোকা ধরা ফাইল, শ্বাসকষ্টে ভোগছে কবিতাটি
শাল বৃক্ষের ছাল ছিঁড়ে বন্য পদ্যের  শব্দ গাঁথি
কেউ ক্যান নষ্ট করে__ছিঁড়ে দেয়  সম্প্রীতির ঘুড়ি!

কাঁধে
কুড়াল নিইনি তবু, বনদস্যু__কাঠচোর
বৃক্ষের ফাটা ঠোঁটে দেইনি মেখে বিষ!_মাইনাস
হয়ে যাই তবু মাইনাস ফর্মুলায়_
বিচলিত
নই! এমনিতেই  নড়ে আনারস পাতার শুঁড়

কবিতার নীল ঘোড়া মৃত ঘাস খায় বারো মাস
পাখির বাসায় ধোঁয়ার কুণ্ডলী; পাখি __কার মতো ?
.
১৩.০৬.১৯

.
গাছের গর্তে রেখে আসা অন্য জীবন
.
রোদ পোহানোর দিন নয় এখন
, আগুন ঝরে
মেঘ ফুঁড়ে , ঘেমে ওঠে বন-পাহাড়, বিল-হাওর
পিট সিগারের গানে বাঁচার আকুতি খুঁজে পাই-
বৃষ্টি হলেই চরপাড়া ভাটিকাশর ডুবে যায়
বৃষ্টি হলে গাঁজাখোরের জাহাজ ভাসে হাঁটু ডোবা
জলে , কত গান গাইতে ইচ্ছে করে বাঁশ টুপিতে
মুখ ঢেকে। গাছের গর্তে রেখে আসা অন্য জীবন
খুব মনে পড়ে__অঝোর ধারায় বৃষ্টি ঝরে চোখে__
অন্য কোথাও মরা পালক ভেসে যাচ্ছে তীব্র স্রোতে
জাম ফলের ফেনায় ফ্রেস হ’য়ে _আকাশে তাকাই
ভালোলাগে__জীবন কত সুন্দর!মায়াময় লাগে
বেশি করে শুনি পিট সিগারের গান __ধোঁয়া ছেড়ে

দূরের বারান্দায় মাকড়শার জাল দোলে ওঠে
‘ভালোবাসি’ কোনদিন তোমাকে বলিনি মুখ ফুটে...
.
১৪.০৬.১৯
  .
আহারে! তোর বোঁটা ছেঁড়া মন কোথায় আছে পড়ে?
.
সবাই যত্ন করে রাখে পাগলা শৈশব গোপন 
বৃক্ষ কোটরে। ধূমল শীতের ভোরে উঠোনে পড়ে
আছে বোঁটা ছেঁড়া মন বিভোল ফুল__গোলাপ কুঁড়ি
!
বাঁশ বাগানের বাঁশের পাতা-  ঝরে বিপুল ঝড়ে__
ওলটপালট কত কিছুই __ছাদে শুকানো শাড়ি
সময় হলে খুঁজবে  সবাই__কোথায় যেন বাড়ি?
কচি নিম পাতার মতো সন্তানের নরম ঠোঁট
ভুলে যাবো
- বাবা-মা ডাক _কোমল আঙুলের ছোঁয়া
.
যত্ন করে রেখো ভালোবাসা_ গোপন বৃক্ষ কোটরে
নিজস্ব একলা মধ্য দুপুরে, খুলে দেখো ডাইরি-
পাসওয়ার্ড দেয়া ফোল্ডার, ভালোলাগবে অনটনে
দিনও
অথবা খোলো ফটোর পুরোনো এলবাম 
হাত ঢুকালেই মনে পড়বে_কে কোথায় ছিলাম
আহারে
! তোর বোঁটা ছেঁড়া মন, কোথায় আছে পড়ে?
.
১৫.০৬.১৯
.
কী আষাঢ়, কী চৈত্র!
.

থাবা গুনে গুনে সিঁড়ি ভাঙছি শেষ হয় না উপরে
ওঠা
লাঞ্চ বক্স থেকে বেরুচ্ছে বাসি-পচা দুর্গন্ধ
কাচারি ঘাটে শোড়ষী গান শোনে মাথা নেড়ে নেড়ে
এত দীর্ঘ সিঁড়ি__ আর কত ধাপ বাকি?__মুখ বন্ধ
করে  দ্যাখি জল খেলা –ছোট হ’য়ে গ্যাছে ব্রহ্মপুত্র
বাজনা বাজিয়ে ছুটছে মানুষ বোঝাই ট্রলার
বৃষ্টির  ফোঁটায় ঝাপসা_বাঃ কী অপরূপ আষাঢ়!
অভিভূত মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছি অসমান-ক্ষুদ্র
সিঁড়ির ধাপে
ফুরিয়ে যাচ্ছে পানের খিলি , ফুটছে
ক্যাটলি , উড়ে স্বাদহীন বিড়ির ধোঁয়া__দিক হারা...
ভিজে চুপসে হেঁটে যাচ্ছে কাগজ কুড়ানি ছেলেরা;
দুঃখ-কষ্টে যাদের জীবন গড়া
__বর্ষা বারোমাস
কী আষাঢ়, কী চৈত্র,   সবি সমান _ জৈষ্ঠ মধুমাস!

দিন গুনে গুনে মাস গুনে গুনে ক্লান্ত দিশেহারা_
.
১৬.০৬.১৯
.
পুরানো কথা নতুন করে
.
পোস্ট অফিস
কেউ চিঠি ফেলে না তালা ভাঙা বক্সে
পোস্ট বক্স ঘুমায়__নিচে ঘুমায় কুমারী কুকুর-
মাছ নেই । ব্যাঙ্গাচীতে ভরা ঘোলা জলের পুকুর
পুরানো জামা ফেলে এসেছি জংধরা টিনের বাক্সে।
কাঠের বন্দুক ছিলো, আরো ছিলো সুতোর পুতুল
মেলা থেকে কেনা টুপি__তোমার জন্য চুলের কাঁটা
বয়স হ’লে কারোর,  মনে থাকে না সবার কথা!
মনে নেই, কে তোমাকে ভালোবেসে দিয়েছিলো __ফুল?
ঘুমন্ত পোস্ট বক্সে হঠাত করেই মেইল আসে!
মেইল মানে উড়ন্ত চিঠি __যত্নে লেখা ক্ষুদে বার্তা...
সেলফোন শব্দ ক’রে ওঠে__তোর মুখের আলোতে

চ্যাঁচামেচিতে ভরে ওঠে__স্তব্ধ দুপুর, রঙিন ঘাসে,
চার্জ নেই দম নেই __ নিভে গেলো ফোনের বাতিটা
সেলফোন শব্দ ক’রে ওঠে__তোর মুখের আলোতে

.
১৭.০৬.১৯
  .
 ডেস্কটপের পেতনী 
.
বইমুখে বন্ধুর দেয়া লিঙ্ক থেকে হ--র দ্যাখে
ভয়-ভয় করছিলো রাতটা; ফুঁয়ে নিভে না মোম!
তান্ত্রিকে ভরা আন্তর্জাল, এখানেও প্রতারণার
ফাঁদ
চিলের মৃত ডানা নড়েচড়ে ওঠে টেবিলে!
অসাবধানী আমিও, গলিঘুঁজিতে হাত বাড়াই
পা বাড়াই
ডেস্কটপের গুহায় নারী মাকড়সা
বড্ড জ্বালাতন করে, মধ্যরাত হলে চ্যাটে ডাকে
আমি সাড়া দিই না, অবেলায় শুনি না আড় বাঁশি-

ফোন বন্ধ করে জানালায় তাকাইআম ডালের
ফাঁক গলে টুকরো টুকরো মেঘ ঘুরছে  জ্যোৎস্নায়,
তন্দ্রিত চোখে দেখি কে যেন ছুঁড়ছে ঢিল ডেরায়;
আমি দৌড়ুচ্ছি পেছনে আলখাল্লা পরা অশরীরী-
দৌড়ুচ্ছি কবিতা লেখার ল্যাপটপ ফেলে রেখেই
শেষে রেগেমেগে চেপে ধরি তান্ত্রিকের শীর্ণ গলা...

১৮.০৬.১৯
.
কবি বোহেমিয়ান, শিল্পের দারোয়ান
.
হিম জ্যোৎস্নায় বোহেমিয়ান; বনবাদাড় পেরিয়ে  
বাড়ি খুঁজে ! ঘুম ভাঙে আনারস পাতার, পায়ের
চাপে
দরোজায় কেউ নেই দুয়ার খুলে দেবার?
পেছনে মশার ঝাঁক, টলতে টলতে বারান্দায়-
বারান্দাতেই শোয়ে পড়লো বোহেমিয়ান
চিৎকার
রে কাঁদতে চায়__কম জোর কন্ঠে! কিছু খায়নি?
সারাদিন কোথায় যায়!_ডায়েরি হাতে কার সাথে
ঘুরে, কোন রমণীর প্রেম-টেম লিখেটিকে রাখে ?

কবি বোহেমিয়ান, নিজ কুঠূরিতে কবির মন
য় না পড়ে থেমে
পূর্ণিমায় অস্থির, ভবঘুরে  
নেমে যায় কুয়োতলার গভীর জলে__বাঁকা নখে
তুলে আনে ক, , _ গড়ে তোলে  শব্দের মসলিন;
বিরান বনে হরিণ শিকারির মতো পালোয়ান
কবি যাযাবর-বোহেমিয়ান, শিল্পেরো দারোয়ান
.
১৯.০৬.১৯
.
ঘুমের ঘোরে
.
পাহাড়ের বাঁকানো কোমরে বেঁধে নৌকো রেখে যায়
বাজার মাতানো তম্বী বেদেনী। সাপ আর ভ্রমর
নিয়ে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে__গান গায় ঠুংরি তালে-
পরনে প্রিন্টের লাল শাড়ি
_মজা করে পান খায়;
ঘুরতে ঘুরতে আটকা পড়বে কার ফাঁদা জালে
এমন মাথা ঘুরানো তম্বী বেদেনীরে কে না চায়?  
সবাই ভালো লোক নয়, পাজি সবাই তলে তলে
পিরানহা, মাংস খেকো_  সুযোগ মতো দেয় কামড়!
কফির আমেজ শেষ হ’য়ে গেলে খুব ঘুম আসে
চুটিয়ে টকি দ্যাখার মজা ফুরিয়ে যায় নিমেষে

খুন, জখম, প্রেতাত্মা _জমাট বাঁধা রক্ত শেষের
দৃশ্যটা ঘুমের ঘোরে ; মনে নেই বেদেনীর ঠোঁট
ক্যামন করে মাছ হয়ে গেলো জলে নামার পর!

জাদুর বাস্তবতায় ডুবে সহজে জাগে না বোধ
.
২০.০৬.১৯
  .
সংখ্যালঘু ফড়িঙেরা
.
তাড়িয়ে দিলে কোথায় যেতাম?_তাড়া খাওয়ার ভয়
মাঝে মাঝে জেগে ওঠে। পালক ছড়াই বনপ্রান্তে
ফড়িঙের পাখার হাওয়ায় আলবাঁধা ধানের খেতে

ঢেউ ওঠে; শব্দ করে ওড়ে কাঠফড়িঙ , বিস্ময়
ভরা চাহনি  নিয়ে পথে বেরুই সদা ত্রস্ত চিত্তে-
সতর্ক বক যেন, আক্রান্ত হতে পারি ঘাতকের
তীরে! ইদানিং কেউ বলে না মুখ ফুটে সাম্যের
কথা
ভেজা ঘাস __সংখ্যালঘু ফড়িঙের ডানার রক্তে

তাড়িয়ে দিলে যাবো কোথায়? রে তবু ভাস্তুভিটা
ছাড়া
গাজনী-মধুপুরে,  দূর-পার্বত্য-চট্টগ্রামে
উচ্ছেদ
ভয়ে রাজশাহীর গোদাগাড়ী, সিলেটের
খাসি পুঞ্জী, গাইবান্ধার  বাগদা! আতঙ্ক ছাড়ে না__

তাড়িয়ে দিলে কোথায় যেতাম?_তাড়া খাওয়ার ভয়
মাঝে মাঝে জেগে ওঠে। পালক ছড়াই বনপ্রান্তে...
.
১১
.০৬.১৯
.
সবারেই জ্বালায় অতীত অতৃপ্তি
.

ফেলে দিয়েছি বাসি আপক্কা সিগারেট , রোদ পোড়া
জীবনের ক্ষত, ব্যর্থতা ঢেকে রাখি মহা পয়ারে_

ভুল ছন্দে শব্দ গেঁথে, মিথ্যে সুখের স্রাবণ ঝরে
অঝোর ধারায় _খুব ভালোলাগে অপ্রতুল ধরা !
সবারেই তাড়ায় অতীত অতৃপ্তি_আঁধার রাত্রি
কত না-বলা অভিশপ্ত কথারা পেছন পেছন
ঘুরে...রক্তবর্ণ ফাগুনে গোলাপ কুঁড়ির মতন
ব্যর্থ প্রেমের সাক্ষী হ’য়ে__এ’ তো আগুন জ্বলা স্মৃতি __!

সবারেই জ্বালায় অতীত স্মৃতি_অতৃপ্ত আগুন
ক্ষুব্ধ নেশায় দগ্ধ রক্তের দোলা...এখনো ভাবায়-
ভুল ছন্দে শব্দ গেঁথে, সুখের মিথ্যে স্রাবণ র’চে
মিথ্যে স্নিগ্ধ আকাশে অভিলাষী নিদ্রায় ডুবে যাই_
উজ্জ্বল আলোর বন্যায় বারান্দা__ অনন্ত ফাগুন!
কেউ না কেউ তো চায় আরো দিন-কুড়ি যেন বাঁচে...
.
২৩.০৬.১৯
.
আমার পরিবেশ, আমার নদী
.
কাচের গ্লাস ভাঙে, ধূলায় লুটায় তরল সুরা
ঢেলে দাও, ঢেলে দাও সুরা শুকনো-মরু গলায়-
প্রেমের পেয়ালা, দিগন্ত মন্থনে ক্লান্ত; রোদ খরা
সিদ্ধ হচ্ছে নদী-সাগর; উত্তপ্ত  ধরার চুলায়

গাছ কেটোনা, টিলা ভেঙো না, করো না নদী ভরাট
যে বলে সেরে নদী দখল, নিয়ে আসে করাত,
লোভে পরে কাটি পাহাড়-টিলা, করি বন উজার
গড়ে তুলি শহর-অট্টালিকা, আধুনীক বাজার!
নিঃশ্বাসে কষ্‌-বিষ-সীসা, দূষিত বায়ুর শহর
আমার পরিবেশ, আমার নদীবিপন্ন করে কে?
সব হয়ে যাচ্ছে উধাও__ মরচে চেতনা সবার,
দুর্নীতিকে হারাম বলে নিজে  দুর্নীতি করছে যে !!
গাছ কেটোনা, টিলা ভেঙো না, করো না নদী ভরাট
যে বলে সেরে নদী দখল, নিয়ে আসে করাত
.
২৪.০৬.১৯
.
বিপন্ন বনের ধারে
.
চৈত্রের জ্যোৎস্নায় শিকারি যায় না এখন জঙ্গলে
ঝোপঝাড় নাড়িয়ে ঘুরে না এখন বন্য শুকর
জোরে দামা-ঢোল বাজিয়ে শিঙ্গা ফুঁকে মৃত সৎকারে
যায় না এখন আদি মানুষেরা, ভাসে না পূজুর
ফুল, হিজল-জারুলের পাতায় ঢাকা সরু খালে !
জঙ্গুলে সড়কে; ভূতে-ভীত পথচারীর চিৎকারে
ভাঙে না জুম কৃষকের ঘুম পাহাড়-পাদদেশে!
শটি বনে লুকিয়ে পেতে রাখা জালে এখনো ধরা
পড়ে চিত্রল হরিণ, বুনো বিড়াল , বিলুপ্ত প্রায়
সজারু, শুনেছি! বিপন্ন বনের ধারে ঘরবাড়ি
বিপন্নপ্রায় আদি মানুষ! ধর্ম-সমাজ-সংস্কৃতি ,
একদিন ভাষাহীন হবে উজার হওয়া বনের
মতো।  তিব্বতি-বর্মি
, কক বরক__ বিপন্ন সবই
দ্যাখে যাবো সুপ্রাচীন সংস্কৃতির  বিপুল সূর্যাস্ত...

২৫.০৬.১৯
 শব্দকোষঃ দামা= ঢোলের মতো দেখতে লম্বা বাদ্য
.
নরকেই শান্তি খুঁজি
.
এক পেয়ালা পাপে নরক কিনি ।  বাতিল কথারা
উড়ে জোড়া বাঁশের সাঁকোর নিচে... ঠোঁটের ইলিশ
ফেলে নীল মাছি কান পাতে বেতাল ওয়েবে;
শিকড়ে অনন্ত তৃষ্ণা-ক্ষুধা, দৌড়ুচ্ছে ভাবের নৌকো
নিষ্পত্র বৃক্ষ, ছায়া নেই__ তবু দাঁড়িয়ে ছায়া খুঁজি
আইলের শামুক ধান পাতা নাড়িয়ে ঘুরে ক্ষেতে
বিস্মিত কাগুজে ঘুড়ি দখল ক’রে খোলা আকাশ
আরণ্যক সুর তোলে ডেস্কটপ মাতায় দোতারা- 
জলের ত্বকে যেই পড়ে উষ্ণ রোদ, পালিয়ে যায়
শিল্পের মাগুর শিং বেঁকিয়ে
জলনূপুর বাজে
বিস্ময়-মুগ্ধ ভাবোদ্বেল বর্ষার ছন্দোবদ্ধ তালে
নদীকে ছোঁব ব’লে বাড়াই আঙুল, ডুবে যায় জলে
স্বর্গের সিঁড়ি; অসীম জলে পাঠাই তীক্ষ্ণ ডুবুরী
শেষে... পেয়ালা ভরা নরক, নরকেই শান্তি খুঁজি ...
.
২৬.০৬.১৯
 .
জুঁই ঝরে যাবার পরে 
.
ঝোপ-জঙ্গলের বনতুলসী, কলমী, কচুফুল
শেওলা, কাঁচকলা, পাটফুলে তোর কানের দুল,
গরম গরম ভাত, সাথে কুমড়াফুলের বড়া
জুড়িয়ে যায় প্রাণ, বর্ষায় ফুটে কেন্দার-কেওড়া!
কদমতলায় যাই মাথায় গোলপাতার ছাতা
জুঁই ঝরে যাবার পরে __ফুটে পদ্ম, শিয়ালকাঁটা,
এম্নি কত আষাঢ় গেলো, ময়লা কাদা পানি ঘেঁটে
যত খরচ করি ততঃ বাড়ে স্মৃতি-জাবর কেটে
কষ্টের পাঁচালি না শুনাই আজ__মুঠো ভরা বর্ষা
বৃষ্টিতে গোছল ধুয়ে হাসোজ্জ্বল বিকেলের রোদে
চক্চকে সবুজ পাহাড় বন্য ফুলের বাহারে
বৃষ্টি ফোঁটার নূপুর ছন্দে কদম ফোটে আহারে
পঞ্চমের গানে- সুরে মজে দিন কাটে মত্ত-মদে
কষ্টের পাঁচালি না শুনাই আজ__মুঠো ভরা বর্ষা!
২৭.০৬.১৯
.
অস্পষ্ট সন্ধের আলোয়
.

পাতে শালুক-শামুক; মুখ-চাওয়াচাওয়ি টেবিলে
বাতাসে উড়ছে মৃত পাতা পতঙ্গ পোড়া বিকেলে;
জমাট মেঘে বৃষ্টি জমে হয়ে ওঠে ধোঁয়া পাহাড়
দিন শেষ রয়ে যায় প্রশ্ন- আমি কার তুমি কার?
লুকোচুরি যতই খেলি দিন শেষে সবাই একা
অস্পষ্ট সন্ধের আলোয় __লুকিয়ে থাকে কষ্ট রেখা;
পকেটের খুচরো ; গরম করে ভবের বাজার
শালুকফুলে ঠোঁট রেখে, ভেবোনা সবই তোমার।
বাতাসে উড়ছে মৃত পাতা, পতঙ্গ পোড়া বিকেলে
পোড়াবাড়ি পৌঁছে যাবো- সবুজ ঘাসের সাইকেলে!
মানুষের ভিড় ঠেলেঠুলে আন্তর্জালে ব্যস্ত থাকি
বৃথাই তোমার আমার __মৃত ছায়ার ছবি আঁকি !
পকেটের খুচরো ; গরম করে মনের বাজার
কচুফুলে ঠোঁট রেখে, ভাবছো কী সবই তোমার?
.
২৮.০৬.১৯
.
ষণ্ড-মুর্খ-মাতাল মুখ
.
ছুটে আসে ধূলাঢাকা বিবর্ণ দিনের শব্দ-পরি
মর্মঘাতী আরণ্যিক সুর! কর্পোরেট সম্পর্কের
দড়ি টেনে এগুনো যায় না_ছিঁড়ে যায় রুগ্ন দড়ি-
নেই নাড়ির টান! গ্রাম্য পটে গেরুয়া বিকেলের
সংকীর্ণ সরণী ; আগলে দাঁড়ায় নির্বিষ সর্পিণী

প্রস্তরপথে পড়ে আছে বাসি চেরি ফুল, মধুকা...
মুখোশ-কুড়াল হাতে জঙ্গলে ঢুকে মধু শিকারি
গ্রাম এখন তরুণতরুণীশুন্য;  নিরব খাঁ খাঁ __
সাঁকোর উপরে জ্যোৎস্নালো , নিচে অন্ধকার-জঞ্জাল
কতকিছু নেই
সংহতি-একতামনুষত্ব-শিক্ষা ;
সংক্ষুব্ধ আঙুলে কলম ধরি, পেছনে কাঠের ছুরি
গলা কাটতে চায়__মুখোশ পরা রুদ্র-চক্ষু-মূর্তি _

কার বিঘ্ন ঘটিয়ে এসে এখানে ডেস্কটপে গুহা 
খুরে পুঁতে রাখি নিজের ষণ্ড-মুর্খ-মাতাল মুখ
.
.২৯.০৬.১৯
.
আত্মঘাতী বিষ
.
পেটে বিস্ফোরক বেঁধে উড়ে ঘুরে সুচতুর মাছি
স্নায়ুযুদ্ধে বিকল মস্তিষ্ক! রবারবাগানে চাঁদ
উঠেনি!__চুম্বকীয় কাঁটাতারে আঁটকে যায় ড্রোন
ড্রোন তো পাখি নয়__পাখি সীমানা বোঝে না; একই
আকাশ একই পৃথিবী জানে। খড়ের স্তুপে ভূত__
সারাদিন ভূত-ভূত খেলায় ভুলে যাই বাড়ির
খবর! গুলতিতে মারবেল ভরে চালাও গুলি
থামুক পাখির উড়া__ততই বাড়ে ডানার গতি...
.
কবিও মুক্ত পাখি__কলমে লুকানো অগ্নি-বারুদ
শব্দের বিস্ফোরণে পুড়াতেও পারে খড়ের স্তুপ
.
ধূলোঢাকা ঘাসের কার্পেটে দ্রোহী আঁকজোখ
কবি রেগে গেলে ভুলে যায় রিমোট কন্ট্রোল চাপা
কথার তীরের ফলায় লাগায় আত্মঘাতী বিষ...
বিষাদু জ্যোৎস্নাতলে শোয়ে লিখে _তত্ত্ব-কথার শ্লোক!
.
৩০.০৬.১৯
  .
ধূলোমলিন ফাইল
.
মুঠোফোনে ধরে রাখা বৃষ্টি সন্ধ্যা, জলের নিজস্বী 
গলে যায় পাখির ডিম,  ছুঁচের ডগার বরফ !
কর্পোরেশনের বাতি জ্বলা সড়কে জোছনা নেই
অপেরা ব্রাউজারের_ ব্যাকগ্রাউন্ডে বাঁশের বাঁশি!
.
স্ক্রিনের ক্ষীণ আলোয় মান্দি নারী__ চুনিয়া রোদসী!
আছরে পড়া বাতাসের ঢেউয়ে ঠান্ডা-সর্দি-কফ;
ঝড়ে জ্বর ওঠে, মনে হয়_ তুমি তো আছো পাশেই
ছাই জমা অ্যাস্ট্রেতে ধোঁয়া গন্ধ-জ্বর _সুতীব্র কাশি  ...
.
ওপেন করি পুরানো ল্যাপটপ; কত কথা জমে
আছে! ধূলোমলিন ফাইল-ফোল্ডারে __অজস্র-কীট
.
গোল হ’য়ে দাঁড়িয়ে নাচা তামা রঙা পুরুষ-নারী-
আদুরী-দামা-ঢোলের বাজনায় মিথ খুঁজে ফিরি ;
.
অজপাড়া গাঁ-য়ে ব্রডব্যান্ড , গ্রাম নয় ইকো-বনে
টুইটারে রাত জেগে থাকে জুড-জেমস্‌,  ডরথী...
.
০১.০৭.১৯
.
পাখিভোজের পরে
.
পড়ে পাওয়া বিড়ির ফুটকি। উড়ে যাওয়া ধোঁয়া দ্যাখে
ধূমপায়ী কুকুর
উপরে ওঠার সিঁড়ি ভেবে পা
রাখি। উল্টো সিঁড়িটা  দেয়ালের বিপরীতে খাদের
ঢালুর দিকে গ্যাছে নেমে। শত’ চেনা-অচেনা পাখি,
প্রাচীন জলাসয়ে! শেষে পাখি শিকার__ পাখিভোজ !
ফ্লেইম বক্স খালি__আঙুলে আগুন জ্বালাবো কীভাবে?
দূরে কাঁটাটার, পিঠে  ঝুড়ি বাঁধা_খেটে খাওয়া নারী-
হাওরগামী... ছৈ বাঁধা মাছ বোঝাই নৌকো... ছুটছে _

বর্ষার উত্তাল ঢেউয়ের তালে  নাচে ‘সোমেশ্বরী’ 
কী-বোর্ডের বোতাম চাপি - ভাসে ‘রানীখং’ সুন্দরী !
.
রিদমলেশ ! নিজের টাইমলাইনে থাকি বিজি
পাখির হাট বসাই...সীমান্তে  এসে জড়ো সবাই
ভোজের পরে কবিতার গ্লাস ; পুতুল নাচে দুলে
নির্লজ্জ মাছি__ একলা আছি, একলা আছি একলা__
.
০২.০৭.১৯
.
সুদিন আসে সুদিন যায়
.
ভোরের দর্পনে প্রিয় মুখ, হাসছে মরিচ পাতা 
জলেও মুখ ভাসে; জলও মুখ দ্যাখার আয়না
যাকে ভেবে কবিতা লিখি, তাকে  কোনোদিন  পাবো না
বাইরে এখন প্রবল বাতাস__ উড়ে যায় ছাতা।
পরিগ্রস্ত বিক্ষিপ্ত চেতনারা
;  ঠিক থাকে না মাথা
আকাশে চৈতি মেঘ ; দুয়ারে জোছনা ঝরা আঁধার
টানাপোড়েন জীবন, ছোটাছুটি
__ এপার-ওপার
নক্ষত্ররা জেগে আছে গায়ে জড়িয়ে  নকশিকাঁথা !
  .
দুঃসময়ের নিগড় ভাঙা ভোর
চড়ুই মুখর
ভুট্টা খেতে সুতো ছেঁড়া সাদা ঘুড়ি
নড়ে থেকে থেকে 
লাল নীল রঙ্গভূমি; দিন কী কারো সমান থাকে?
ঘাতকেরা চুপে ঘোরে - নাক ডেকে ঘুমায় শহর
.
সুদিন আসেআবার চলেও যায় টুপি উল্টিয়ে
বুনো অর্কিড ঝরে পড়ে যায়, ভীষণ লজ্জা পেয়ে__
.
০৩.০৭.১৯
.
উল্কি আঁকা বল্কলে
.
বাগ্‌বিতণ্ডার পরে শক্তিগর্বিত বর্শাফলক  
বাঁকাচোরা  উল্কি আঁকা বল্কলে বাণবিদ্ধ পতঙ্গ
বারবেলায় বাঁশির সুর , মাঝ রাত্রির কুহক
বাঁশবনে ডোম কানা, এলোমেলো; বইমুখে অঙ্গ-
রঙ্গ
অনলবর্ষী ক্ষোভে চালাও কথার বাটালি
আহত হই, দেখাই না বড়মানষি ! আয়নায়
সৌখিন হাঁস, ভাসায় শব্দের পালক! অলিগলি
ঘুরে বাড়ি খুঁজে তিন ঠ্যাংগা কুকুর বড় মায়ায়!   

কথার ঘটায় রাত বেড়ে যায়! বন্ধ বাতিঘরে
আলো নেই। বাঁশ কঞ্চির বেড়ার ঘরে তারা জ্বলে;
খড়কুটো-ধূপ  জ্বালিয়ে ক’রি বাঁশচটির শিল্প !
জটিল বর্ণপ্রথার টোপে  আঁটকে পড়ে সুবর্ণ-
খচিত মেঘ। ভরে যায় শিল্পভেদী খই-মাগুড়ে
যতই কোরো ঘেউ ঘেউ , তীর ছোড়ো বাকলে... 

০৪.০৭.১৯
.
মধুপুর টু মধুটিলা
.
মধুপুর টু মধুটিলা। আড়ষ্ট থাকা মানুষেরা...
ছেড়ে দিতে হবে না তো সাতপুরুষের ভিটেমাটি!
আভাসে-ইঙ্গিতে  ব’লে__যেন না হয়  জবরদস্তি
নৌকাডুবির দেশে ভিটেহারা
,  ঠায়ঠিকানা হারা!
শার্টের বোতামে ঝুলিয়ে রাখা রঙিন রোদ চশমা
ভেঙে গ্যাছে! বুকের ভেতর মরা স্রোত ছোট্ট ঢেউ
জ্বলজ্বলে জীবন গাঁথা... ক্যান  লিখে না আর কেউ
ঝাঁজালো রোদে টুকরি পিঠে সংগ্রামী  আদিবাসী মা!
ছুঁচালো কঞ্চীতে বিঁধে পায়ে এখন দারুণ ব্যথা

কেউ বলবে পাহাড়-বন পথে হাঁটতে শিখেনি
মাঝে মাঝে গুলির শব্দ! গুলির খোসা পড়ে থাকে
রাস্তায় বন প্রহরী; কাঁধে হরিণের কাটা মাথা
প্যান্টের পকেটে পাখির ডিম-ছানা, বোতলে পানি
বনে ভ্যাপসা গরম... বাতাস আসে উত্তর থেকে...
.
০৫.০৭.১৯
.
সেলাই করা স্মৃতি থেকে
.

বন কেটে তৈরি সরু পথে, লে আসি ঘুরে-ফিরে
মাকড়সার জাল ছিঁড়ে খাদ্য খুঁজে কাঠ পিঁপড়ে,
ছিলো না তেমন কিছু
...পাটাতন পুড়ে ছারখার
নদীর
-ধারে ভাসছে__ ডুবে-মরা প্রেমিকার হাড়!
.
হেরে গলায় গান ধরি, সেলাই করা স্মৃতি থেকে
উদ্ভটকবিতা লিখতে থাকি_ গল্প
-কথার ফাঁকে ,
পূর্বপুরুষেরা বারান্দায় হাঁটে স্তব্ধ মধ্যরাতে
অবান্তর কথোপকথন অন্তহীন রাজপথে
!
.
অবোধ
- অবুঝ বাল্যকালে, ফিরে আসি ঘুরে-ফিরে
পিচ ঢালা সরু জনপথে, কাগজের ট্রেনে চড়ে,
ছন্নছাড়া কাঁটা, চারিদিকে কত জটলা
-জঞ্জাল
আন্তর্জালের রাধা বলে_কোথায় ছিলে এতকাল?
কৃষ্ণের মুখোশ পরেছিলাম, বয়স ছিলো কুঁড়ি
দ্যাখলে সবাই ভয় করতো, পকেটে ছিলো ছুরি
...
.
০৬
.০৭.১৯
বর্ণপ্রথার কাঁটায় বিদ্ধ আদিবাসী
বর্ণপ্রথার কাঁটায় বেঁধা ‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী’  জীবন 
ল্যাম্পশ্যাডের নিচে অপুষ্ট পদ্য, ছিপি আঁটা শিশি;
দোদুল্যমান সাঁকোয় চড়ে যাচ্ছে যাত্রী ‘আদিবাসী’
আধো-আলোয় ভাগ্যে আছে যা তাই ক’রে আলিঙ্গন!
‘আমাদের নিয়ে এখনি লিখো’ ব’লে__ না-লেখা পংক্তি
‘দেশহীন মানুষের কথা’ লিখি কীবোর্ড- বাটনে
পথেঘাটে টীকাটিপ্পনী, সাম্প্রদায়িক গালি কানে
বাজে। অসাম্প্রদায়িক্তার গল্প লাগে  কপট-মেকি!
.
বর্ণপ্রথার কাঁটায় বিদ্ধ আদিবাসী-র  সংস্কৃতি
কন্টকিট সত্তা নিয়ে গুটিশুটি,  নড়বরে খুঁটি !
ক্ষুদ্র-উপ বঁড়শিতে গেঁথে টানো বিভাজন রেখা
আবিল সংকোচে  গুটিশুটি;  থেমে র’য় ভাগ্য-চাকা!
.
উপ-ক্ষুদ্র নয়; আদিবাসী বলতে-ই  ভালোবাসি
আমি ব’লি- ওরা –‘আদিবাসী’ ‘ আদিবাসী’  ‘আদিবাসী’...
.
০৭.০৭.১৯



No comments:

Post a Comment