অণুগল্প



বন মামলা

- বচন নককরেক


এ-তো জোরে পাদ মারলি লুটন, আমি তো মটর সাইকেল আইতাসে ভাবসিলাম ! বলে লাঠি হাতে নিয়ে টুকটুক করে মাটিতে টুকা মারে ভিনসেন্ট। লুটন বলে,
- ধ্যুৎ..., তুই না চোক্ষে দেহস না ...আমারে চিনলি কেমনে ?
ভিনসেন্ট দাঁত না মাজা মুখে হাহা করে হেসে নেয়...আর বলে, গা'র গন্ধ। তোমার লগে এত চলাফেরা করসি , জঙ্গল করসি(কাঠের কারবার), এক লগে থাকসি, খাইসি তোমার গায়ের গন্ধ চিনিনা ? তা এখন কই আসো লুটন ?
- জেলখানায় চাকরি করলাম এক বছর। এহন বাড়িতেই।
ভিনসেন্ট লুটনের কথা শুনে আশ্চর্য হয় প্রথমে। জেলখানায় চাকরি !! ওরে বাবা। পরেই আবার বোঝে নেয় কথাটার মানে। চা দোকানির দিকে মুখ করে ভিনসেন্ট বলে, হা-রা-মজাদা ...সোজা কইরা কইলেই অয় , জেল খাইট্যা আইলাম। জেলখানায় চাকরি তোমারে দিব মাইনসে। জোরে হাসতে গিয়ে লুটনের ঠোঁট থেকে শেখ সিগারেট পড়ে যায়। জলে ভিজে আগুন নিভে যায়। জলে ভেজা অংশটুকু ছিঁড়ে ফেলে দিয়ে আবার জ্বালিয়ে নিয়ে লুটন বলে, কী করমু কও, বন মামলা চালাইতে চালাইতে সব হারাইলাম। বউ, সংসার সব। লুটন যখন জেলে ছিল, তার বউ জেসি, ঢাকা চলে যায় কাজের খোঁজে। আর ফেরেনি। কুমিল্লার এক পান দোকানিকে বিয়ে করে ফেলে। স্বামী , সন্তান রেখে যাকে বিয়ে করল তার নাকি আরো এক বউ আছে দেশের বাড়ি।
.
শীতল পাল বাঁধানও দাঁত বের করে হেসে নিয়ে বলে, মিয়ারা, চা খাবা না ? খালি ছুটুবেলা নিয়া গপ্পই করবা ? কাপ ধোয়ে টুং টুং আওয়াজ তোলে রং চা বানিয়ে দুজনকে দেয়। দোখলা। কিছুদিন পর পিকনিকের গাড়িতে ভরে যাবে ফরেস্ট বাংলো। ২-১ টি আসতে শুরু করেছে। চারটে বড় গজারি গাছের নিচে শীতল পালের চা দোকান। পান, চা, বিস্কুট, গজা, পিঁয়াজু বিড়ি, সিগারেট এই নিয়ে তার দোকান।
.
লুটন ভিনসেন্টের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে, তোর চোখ আর বালা অইলো না রে --ভিনসেন্ট ! হ, ঘর হারাইলেও আমি দুনিয়া দেখতে পাই...তুই তো তাও দেখাহাস না। মহাজনের তাগাদায় একাই গাছ কাটতে গিয়েছিল বনে ভিনসেন্ট। কিন্তু, ধরা খায়। ধরে এনে খুব টর্চার করে সারারাত । পরের দিন চালান দিয়ে দেয়। যখন ছাড়া পায় চোখে কম দেখা শুরু করে ভিনসেন্ট। এখন দেখেই না।
.
গতকাল কাকে যেন ধরে নিয়ে এসেছে ফরেস্ট গার্ডরা। বারান্দার জন্য ঝড়ে ভাঙা ডাল নিয়ে যাচ্ছিল বাড়ি..।.তাকে ছাড়িয়ে নিতে এসেছে মতি পাগলা। শীতল বলছে, হেডম্যান কাহা, কি খাবাইন ?
.
কোমরে গুঁজে রাখা বিড়ি বের করে জ্বালাতে জালাতে মতি পাগলা বলে, আর কবাইন না,জ্বালাইয়া খাই্লো ...পরেস ডিপারমেন । বেগগেরেই মামলা দেয়। বনে থাহাই কঠিন অইতাসে ...। বাপ দাদারা যুগযুগ ধইরা জঙ্গলেই চাষাবাদ কইরা খাইয়া বাইচ্যা আইতাসে...। যারা জঙ্গলের গাছ কাটে না তারাও মামলা খাইতাসে...। গাছ কাটার জন্য যারা টাকা দেয়(মহাজন) তাগো নামে মামলা নাই।