ছোটো গল্প 'বুনোফুল' , লেখকঃ সুবর্ণা পলি দ্রং
-----------------------------------------------------------------------------------------------------
বুক রিভিউ
এক নজরে লেখকের নাম, পরিচয়, শিক্ষা ও কর্মস্থল সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।
বুক রিভিউ
গল্পগ্রন্থের নাম ‘বুনোফুল’
লেখকঃ সুবর্ণা পলি দ্রং
প্রকাশকঃ ভবো রঞ্জন বেপারী
ISBN 978-984-92480-26
নন্দিতা প্রকাশ
বিচিত্রা বই মার্কেট (তয় তলা)
৩৬, বাংলাবাজার ঢাকা-১১০০
প্রচ্ছদঃ রাজিব রায়
প্রকাশকালঃ অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৭
এর মূল্য রাখা হয়েছে ১৫০ টাকা
এক নজরে লেখকের নাম, পরিচয়, শিক্ষা ও কর্মস্থল সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।
সুবর্ণা পলি দ্রং
পিতাঃ মৃত লেলিন দিও
মাতাঃ তন্দ্রা দ্রং
জন্মঃ ১৩ ডিসেম্বর, ১৯৮৫ ইং বোয়ালমারা, গাজীরভিটা, হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ।
বোয়ালমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক, বিড়ইডাকুনী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, হালুয়াঘাট মহিলা কলেজ থেকে উচ্চ-মাধ্যমিক, নাসিরাবাদ কলেজ থেকে বিএসএস এবং আনন্দমোহন কলেজ থেকে মাস্টার্স (রাস্ট্রবিজ্ঞান)। বর্তমানে শান্তিমিত্র কল্যাণ সংস্থার’-র নির্বাহী পরিচালক হিসেবে কর্মরত আছেন।
এ পর্যন্ত বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, ছোট কাগজে কবিতা, ছোটগল্প ছাপা হয়েছে।‘বুনোফুল’ তার প্রথম প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ।
ছাতা, অনুরনণ, চিঠি, আলো-ছায়ার খেলা, বুনোফুল, যে গল্পের কোন নাম হয় না, অন্ধকার, মা –এই ৮ টি গল্প স্থান পেয়েছে বইটিতে।
বইটি যখন হাতে পাই তখন পড়তে পারিনি চোখের কারণে। এখন পড়ছি, আর পড়তে পড়তে ভাবছি, বাঃ দারুণ গল্প লেখার হাত সুবর্ণা পলি দ্রং এর। আমি নিজেও দুএকটা গল্প লেখার চেষ্টা করেছি। আমার ‘গাছ’ আর ‘নিশী লীলা’ গল্প দুটি বেশ পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে।ছোটপ্রাণ ছোটব্যথা ছোট ছোট দুঃখ কথা-নিয়ে ছোটগল্প রচিত হয়।লেখক সুবর্ণা পলি দ্রং কবিতাও লিখে বেশ।আমি তার কবিতা পড়েছি ফে্সবুকে ও বিভিন্ন লিটল ম্যাগে।গল্পও তাই।লেখকরা সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে, প্রতিবাদী চেতনা থেকে, কষ্টকর জীবন সংগ্রামের অভিজ্ঞতা থেকে কলম ধরে যা গল্প-কবিতা হয়ে পাঠকের সামনে উপস্থিত হয়! আমরা পাঠকরা পড়ি, মুগ্ধ হই।বই আলোচনা, গ্রন্থ সমালোচনা, পুস্তক পর্যালোচনা কোনটাই আমার উদ্দেশ্য নয়। আমার এই সামান্য লেখাটা পাঠলব্ধ মুগ্ধতার অনুভূতি প্রকাশ মাত্র। তাই কেমন গদ্যে রচিত হয়েছে গ্রন্থে গ্রন্থিত গল্পগুলো, তা বলার প্রয়োজনবোধ করছি না। একটি বই পড়ার পর প্রাপ্ত অনুভূতি, তৃপ্তি, আনন্দ, ভালোলাগা, মন্দলাগা অন্যকে জানাতে ইচ্ছে জাগে। এই ইচ্ছে জাগা থেকেই সামান্য লেখার প্রচেষ্টা।
‘বুনোফুল’ গল্পগ্রন্থ নিয়ে প্রথমেই কবি, প্রকাশক বি ভি রঞ্জন দার ছোট কিন্তু তীক্ষ্ণ ভূমিকাটি উল্লেখ করার প্রয়াস পাচ্ছি। ‘সুবর্ণা পলি দ্রং, যার জন্ম বেড়ে ওঠা সোমেশ্বরীর পাড়ের লালমাটির সোঁদা সোঁদা গন্ধ গায়ে মেখে; সে লেখেও প্রকৃতি আর মানুষের মেলবন্ধনের কথা। তার গল্পে উঠে আসে চারপাশের জীবনচিত্র।শিশুতোষ কিংবা সাধারণ জীবনের জলছবি ফুটে ওঠে তার শব্দ ব্যঞ্জনায়।তাই তার গল্প শুধুই গল্প নয়; জীবনের সত্যিকার চিত্রের ক্যানভাস যেন-বুনোফুলের মতো অনাদরে যা শুধু দৃষ্টি নন্দন নয়, সুবাসও বিলায়। আশা করি তার প্রথম প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ ‘বুনোফুল’ পাঠকপ্রিয়তা লাভ করবে।’-বি ভি রঞ্জন! বুনোফুল-র গল্পগুলো পড়ার পর, আমিও একমত বি ভি রঞ্জন দার সাথে।
লেখক, প্রতিটা গল্পই লিখেছেন এক, দুই, তিন, চার —–এভাবে। অন্যভাবেও লেখা যেত। আদিবাসী লেখকদের লেখায় আদিবাসী জীবনের লড়াই, সংগ্রামের ছিটেফোঁটা ফোটে উঠবে তা-ই স্বাভাবিক। ‘বুনোফুল’ গল্পগ্রন্থের প্রতিটা গল্পের চরিত্র পাঠ করলে বোঝা যায়, সবাই নিজনিজ জায়গা থেকে যুদ্ধ করছে টিকে থাকার জন্য। টিকে থাকার জন্য শহরে পাড়ি জমাচ্ছে।কেউ পড়াশোনার জন্যে, কেউ জীবিকার জন্যে পার্লারে, শপিংমলে, কেউ গার্মেন্টসে, কেউ বাসার কাজে ঢোকে পড়ে।সেসব সমাজ বাস্তবতার বাস্তব চিত্র সরল গদ্যে গল্পশিল্পী সুবর্ণা পলি দ্রং তোলে ধরেছেন ‘বুনোফুল’ গল্পগ্রন্থে।
একটি ছেলে দাদুর জন্যে মাছ কিনতে এসেছে দশ টাকা নিয়ে। কিন্তু , এই বাজারে দশ টাকায় কেউ ছোট মাছও দিতে চায় না। গরিব সেই ছেলেটার সাথে তিতির নাম্নী এক স্কুল শিক্ষিকার দেখা হয়। ছেলেটার দাদু খুব অসুস্থ, মাছ খেতে চেয়েছে-‘আপা, আজকাল দশ টাকায় কি মাছ পাওয়া যায় আপনিই বলেন ?‘ নিত্য দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সময়ে দোকানি একখান কথা শুনিয়ে দেয় তিতিরকে। তিতির মাছ কিনে দেয় নিজের টাকায় ছেলেটার জন্যে। যেন অসুস্থ দাদুর ইচ্ছে পুরণ হয়। পরে ছেলেটার জন্যে ছাতাও দিয়ে দেয়। ছেলেটা ছাতা ফেরত দেবে বলে গেলেও সেদিন আসেনি ছাতা ফেরত দিতে। গল্পটি মূলত সেই ‘ছাতা’ আর মাছকে ঘিরেই। ‘আপা, সেদিন রাত্রে আমার দাদু মারা গেছেন। আপনার কথা বলেছিলাম বলে আপনাকে খুব দেখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এত বৃষ্টি আর পানি ছিল যে আপনার ছাতাও ফেরত দিতে আসতে পারিনি। ‘ বুনোফুল (ছাতা, পৃঃ১৫)। কিছু মানবিক বিষয়, মায়া-মমতা, স্কুল শিক্ষিকার কোমল হৃদয়ের সাক্ষাৎ পাই ‘ছাতা’ গল্পটিতে।
ছাতার মতো অনুরণন, চিঠি, আলো-ছায়ার খেলা, বুনোফুল, যে গল্পের কোন নাম হয় না, অন্ধকার, মা-র মতো ভালোলাগার মতো দুএকটি গল্প আছে গল্পগ্রন্থটিতে।ছোটগল্পে থাকে সাধারণ মানুষের সাধারণ সুখ-দুঃখের কথা।
‘অনুরণন’ গল্পে কবিতা আবৃতিকে কেন্দ্র করে অরণ্য আর লতার পরিচয়, পরে প্রেম, সম্পর্কের টানাপোড়েন, দূরত্ব, ব্রেক-আপ আবার অ-নেকদিন পর বাস গাড়িতে দেখা, দীর্ঘশ্বাস সত্যি অনুরণন তুলবে পাঠকের হৃদয়ের গহীনে।তারপর পরের গল্প ‘চিঠি’। এটিও মূলত মিষ্টি প্রেমের গল্প। ‘আলো-ছায়ার খেলা’ পরকিয়া ধাঁচের গল্প। অনেক সময় কেউ জানিনা কখন, কাকে, কার ভালোলেগে যায়! আর এই গোপনে পোষে রাখা ভালোলাগার প্রকাশটাও ঘটতে পারে বিচিত্রভাবে।‘বুনোফুল’ গল্পে তিলোত্তমার শহরে চলে যাওয়া, বিউটি পার্লারের কাজে যোগ দিয়ে গরিব বাবা-মা, ভাইবোনের মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা- এটা, বিশেষ করে মান্দি সমাজের বাস্তবচিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে।
লেখক সরল, সাবলীল, প্রাঞ্জল ভাষায় গল্পগুলো লিখেছেন। আশা করি সবারই ভালোলাগবে।
#
হ্যাপি রিডিং
হ্যাপি রিডিং
বচন নকরেক কবি, গল্পশিল্পী, প্রবন্ধকার।
No comments:
Post a Comment