![]() |
সুভাষ জেংচাম |
সুভাষ জেংচাম, একজন জীবন্ত কিংবদন্তির কথা।
মান্দি সমাজের বিশিষ্ট লেখক, গবেষক সুভাষ জেংচাম ১৯৪৩ খ্রিঃ ২০ শে জুন ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়িয়া থানার দরগাচালা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করেন পরে বিরিশিরি মিশনারি হাইস্কুলে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হন ১৯৫৩ সালে । সেখানে ১ বছর পড়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণি পাস করে আবার নিজ এলাকায় ফিরে আসেন। বাড়ি থেকে চার মাইল দূরে পলাশীহাটা হাই স্কুলে ৭ম শ্রেণিতে ভর্তি হন। চার মাইল রাস্তা যাওয়া আসা করেই পড়াশোনা করেন । চার মাইল হেঁটে যাওয়া আসা করে ক্লাস করা কষ্টকর ছিল। পরে এখান থেকে ৭ম শ্রেণি পাস করে বাড়ি থেকে ১০ মাইল দূরে ধলাপাড়া হাইস্কুলে ৮ম শ্রেণিতে ভর্তি হন। এবং এখানে ৩ বছর অধ্যয়ন করে এই স্কুল থেকেই ম্যাট্রিক পাস করেন। ধলাপাড়া স্কুলে পড়াকালীন সময়েই তিনি খ্রিস্ট ধর্মে দীক্ষা নেন। তখন তাঁর বয়েস হয়েছিল ১৫ বছর। ১৯৬৪ সালে ঢাকা নটরডেম কলেজে ভর্তি হন। এবং এ কলেজ থেকেই ইন্টার্মিডিয়েট পাস করেন। এইচএসসি পাস করার পর তিনি পুনরায় নটরডেম কলেজেই ডিগ্রিতে ভর্তি হন ও উত্তীর্ণ হন। এইচএসসিতে বাংলায় ভালো ফল করেছিলেন বিধায় বাংলা সাহিত্যকে অন্যতম বিষয় হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন ডিগ্রিতে।
এক সময় উচ্চ শিক্ষার আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন। এখানে ওখানে ঘোরাফেরা করে বাড়িতে মন বসাতে না পেরে চলে এসেছিলেন ময়মনসিংহ শহরে (১৯৬৩ সাল)। এবং এখানে এসে সেন্ট মাইকেল হাসপাতালে করণিকের চাকরি নিলেন ত্রিশ টাকা মাস মাইনের।এবং এখানেই তিনি তাঁর কর্মজীবনের সূচনা করেন। এখানে তিনি বছর খানেক ছিলেন। সে সময়ে সেন্ট মাইকেল হাসপাতাল ছিল ময়মনসিংহ শহরের মধ্যে প্রথম শ্রেণির হাসপাতাল। এরপর তিনি উচ্চ শিক্ষার জন্য ঢাকা চলে যান। ঢাকা নটরডেম কলেজে ডিগ্রি পরীক্ষা দিয়ে তিনি জলছত্র মিশনে ফাদার হোমরিকের কাছে চলে যান তাঁর সদ্য প্রতিষ্ঠিত জুনিয়র স্কুলে শিক্ষকতা করার আশায়। তিনি জলছত্র জুনিয়র স্কুলে দেড় বছরের মতো শিক্ষকতা করেন । জলছত্র স্কুলে শিক্ষকতার কাজে যোগদানের পরপরই তিনি প্রাদেশিক সিভিল সার্ভিস (ইপিসিএস) পরীক্ষায় অংশগ্রহণের আবেদন করেন। এবং পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে কৃতকার্যও হন (১৯৬৮)। সবকিছু আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রাদেশিক সরকার তাঁকে সাব-রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগ দেন (১৯৬৯) ফরিদপুর জেলার মুকসুদপুর থানায়। তিনি দেশের বিভিন্ন জেলায় সততা, নিষ্ঠা ও সুনামের সাথে দীর্ঘ ৩০ বছর দায়িত্ব পালন করে গেছেন। তাঁর দীর্ঘ সরকারি চাকরি জীবনে সর্বশেষ শেরপুরে জেলা রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত ছিলেন এবং ২০০১ সালে অবসর গ্রহণ করেন।
তিনি ভীষণ পড়ুয়া ছিলেন। প্রাইমারিতে অধ্যয়নকালীন সময়ই রামায়ণ, মহাভারত, গীতা পড়ে ফেলেন। বন্ধুরা যখন খেলাধুলায় ব্যস্ত থাকত তখন তিনি বই পড়ে সময় কাটাতেন। গল্প-উপন্যাস, ভ্রমণ সাহিত্য, ্প্রবন্ধ পড়েছেন। তাঁর লেখকের তালিকা দীর্ঘ -রবীন্দ্র, শরৎ, বঙ্কিমের পাশাপাশি জলধর সেন, রামানন্দ সরস্বতী, প্রবোধকুমার সান্যাল, বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়, সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় , শঙ্কু মহারাজ, কালকুট, নবনীতা দেবসেন, সুবোধ কুমার চক্রবর্তী ও উমাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় আরো কত লেখকের নাম যুক্ত হয়েছে ইতোমধ্যে। কারণ তিনি পড়তে ভালোবাসেন।\
২১ এপ্রিল ২০১৭ পোপের প্রতিনিধি ভাটিকানস্থ বাংলাদেশের রাস্ট্রদূত আর্চবিশপ জর্জ কোচেরি কর্তৃক (ক্রশ অব অনার)সম্মাননা পান।
তাছাড়াও মান্দি আদিবাসীদের মাঝে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরুপ -Greater Mymensingh Garo Researcher, Writer and Poet Convention Committee কর্তৃক সম্মাননা ক্রেস্ট পেয়েছেন।
তিনি ভীষণ পড়ুয়া ছিলেন। প্রাইমারিতে অধ্যয়নকালীন সময়ই রামায়ণ, মহাভারত, গীতা পড়ে ফেলেন। বন্ধুরা যখন খেলাধুলায় ব্যস্ত থাকত তখন তিনি বই পড়ে সময় কাটাতেন। গল্প-উপন্যাস, ভ্রমণ সাহিত্য, ্প্রবন্ধ পড়েছেন। তাঁর লেখকের তালিকা দীর্ঘ -রবীন্দ্র, শরৎ, বঙ্কিমের পাশাপাশি জলধর সেন, রামানন্দ সরস্বতী, প্রবোধকুমার সান্যাল, বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়, সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় , শঙ্কু মহারাজ, কালকুট, নবনীতা দেবসেন, সুবোধ কুমার চক্রবর্তী ও উমাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় আরো কত লেখকের নাম যুক্ত হয়েছে ইতোমধ্যে। কারণ তিনি পড়তে ভালোবাসেন।\
২১ এপ্রিল ২০১৭ পোপের প্রতিনিধি ভাটিকানস্থ বাংলাদেশের রাস্ট্রদূত আর্চবিশপ জর্জ কোচেরি কর্তৃক (ক্রশ অব অনার)সম্মাননা পান।
তাছাড়াও মান্দি আদিবাসীদের মাঝে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরুপ -Greater Mymensingh Garo Researcher, Writer and Poet Convention Committee কর্তৃক সম্মাননা ক্রেস্ট পেয়েছেন।
সুভাষ জেংচাম একাধারে একজন লেখক, গবেষক, চিন্তাবিদ ও বুদ্ধিজীবি। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ - বাংলাদেশের গারো সম্প্রদায় (বাংলা অ্যাকাডেমি কর্তৃক প্রকাশিত), গারো আইন, পান্থজনের পাচালী, গারোদের সমাজ ও সংস্কৃতি।
পান্থজনের পাচালী-বোদ্ধা পাঠকের মনে দাগ কাটতে পেরেছে। তাঁর জন্ম, বেড়ে ওঠা, স্কুল-কলেজ জীবন, পরিণয়-বিয়ে, চাকরি জীবন, নিজ সম্প্রদায়ের কথা, পরিবারের কথা প্রাঞ্জল ভাষায় তুলে ধরেছেন জাত কথা সাহিত্যিকের মতো। পান্থজনের পাঁচালী – নিঃসন্দেহে তাঁর অনবদ্য একটি রচনা।পান্থজনের পাঁচালী -মূলত এটি তাঁর আত্মজীবনীমূলক রচনা। যাকে উন্নত সাহিত্য সৃষ্টি বলা যেতে পারে।
বই পাগল, সাহিত্য অনুরাগী মান্দি জাতির এই বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবির অবসর সময় কাটে বই পড়ে, বিভিন্ন সেমিনারে বক্তৃতা দিয়ে। তার দীর্ঘায়ু কামনা করি।