চতুর্দশপদী কবিতাবলী



চতুর্দশপদী কবিতাবলী
-বচন নকরেক

অচেনা শিকল

পালিয়ে যায় খাঁচার হরিণবাসনা
ঝরে পড়ে ঘাসবনেঅবাধে ঘুরছে
শিকল খোলা হরিণমায়াবিনী চোখে
দেখে বিপুলা পৃথিবীপাহাড়-ঝরনা!
পাখিরা উড়ে আসেকাঁধে বসেজিড়োয়
সবুজ বনানীফুলবাহারি অর্কিড
মুক্ত ডানাসুতো ছেঁড়া ঘুড়িযা পার্থিব
শুধু তাই পেতে ব্যাকুলআয়ু ফুড়োয়_
স্বাধীনতা চাইমেলেনি কোনওদিন
বন্দি 'রে রাখে সুতোর শক্ত বাঁধনে
অচেনা শিকলমায়ার বন্ধন এক
শিকল পরা মানুষছুটছে সঙ্গীন
মুক্তির আশায়জঠর হতে ভূ-বনে
অবশেষে ব্যর্থ 'য়ে শরাবে রঙ্গিন..

৩০..১৬


মুক্ত বিহঙ্গ হও

কথার পাপড়ি ঝরছে বিকেল ছাদে 
মানবতার গানবেহাগে বাজেকানে
অফুরন্ত ভালোবাসা নিঃস্বর্গ উদ্যানে;
মন খারাপ করোনাবাঁচো ভাতে-দুধে!
স্বপ্নে মাখো ঘিপ্লাউখুরমারুচিমতো
পরো ময়লা জামা ধুয়ে,  চশমা মুছে
নাওজীবন ক্যামন করে পাল্টে গ্যাছে !
সবুজ মাখো বুকে , ঘাসে পা ফেলে হাঁটো,
.

মুক্ত বিহঙ্গ হওউঁচু পাহাড় ঘেঁষে
উড্ডীন মেঘবাতাসের ধাক্কায় ভাসে
যেন প্রজাপতির ঝাঁকখয়েরি-বক্র
মেঘডোরাকাটাবিচিত্র জীবনচক্র
ঢেউয়ের ভাষা রপ্ত 'রে দাঁড়াওনা
ঝড়ের প্রতিকূলে; জাগো, জ্বলো  চেতনা . ..


৩১..১৬

স্বপ্নের জলটুঙিতে

প্রেমে পড়া এখন কত সহজসার্চ
দিলেই ভেসে ওঠে প্রিয়জনের মুখ,
যেন খোলা জানলায় বসে আছে কথা
দেয়া সে- মানুষীকালো হরিণী চোখ
গুগলেস্কাইপেটুইটার ম্যাসেঞ্জারে
হাইহ্যালো_কেমন আছো বলোকেমন
কাটলো দিনগুলোমনের যোগাযোগ
হৃদয়ের লেনাদেনাদিনে দিনে বাড়ে-
 _বন্ধুএইবার ভাবছি অন্যকিছু
হাতটি বাড়িয়ে দাওঠোঁটটা বাড়াও
স্বপ্নের জলটুঙিতে চড়ে ভাসবো দোঁহে
ডেস্কটপের চিলছেঁড়া ঘুড়ির পিছু
ছুটছে সবাইতুমিআমি সে ছাড়াও
একটু দাঁড়াও _আমাকেও সাথে নাও!


..১৬

ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত পৃথিবীর ফুসফুস

জখম বনে লাগাওবীজ-বৃক্ষ শিশু!
পৃথিবীর ফুসফুস ব্যাকটেরিয়ায়
আক্রান্ত। ধোকে মরছে তৃষ্ণায়-ক্ষুধায়
বাড়ছে দুর্যোগ; বিপন্ন বনের পশু!
পোড়া বাকলের শ্বাসকষ্ট, জ্বালাপোড়া
সমুদ্রের তীরে-তীরে ভাসমান মৃত
জলজপ্রাণী, পেটে বিষ, দুষিত রক্ত
জন্মাচ্ছে বিকলেন্দ্রিয় শিশু; মাথা জোড়া।
.
ভূমিদস্যু ও বনদস্যু মিলে করছে
ধর্ষণ সবুজ বনবিথী-স্বাদু জল!
পত্রহীন রুক্ষ বনে ফুলও ফোটে না
শস্যহীন গোলাবাড়ি! খিদেয় জ্বলছে
জঠর। মানুষ পাবে তার  কর্মফল
.
খাদ্যে মিশিয়ে বিষ; কেউ-ই মানুষ না ...
.
১২.০৭.১৯

বাসি ফুল গন্ধ ছাড়ে

যতই হাঁটছি ততঃ সরে যাচ্ছে বন
আসে না আর হাতে হাসি-অশ্রুর চিঠি!

ছন্দোবন্ধ শব্দে বন্দি কত স্বপ্ন-পণ
সরে যাচ্ছে সোনার দিন, জাদুর কাটি।

হৃদয়ে ওঠে যে ঢেউ চিরতরঙ্গিত
কথার তীরে বিঁধে হই না শিহরিত;
হাসি কান্নার স্মৃতি ভাসে পর্দার ত্বকে,
বাসি ফুল ভেজা গন্ধ ছাড়ে-  থেকে থেকে!

ঘনিয়ে আসে অন্ধকার__জীবন সন্ধ্যা
পাঁশুটে দিনে তুমি ছিলে রজনীগন্ধা!

যত কাছে আসি ততঃ সরে গেলেদূরে
হৃদয় পাতালে বাজে শোক-বিউগল
জ্বলে আগ্নেয়গিরি, উন্মাতালভূতল!
দিন যায় জাবর কেটে__কুয়োর ধারে ...
.
১৩.০৭.১৯

 -নেক চাওয়ার পরে
.
আকাশ লুন্ঠন করে এসেছে বরষা!
কবির মতো মদিরা কষ্ট কাঁধে বয়ে,
অবিরল বৃষ্টিধারা ঝরে চোখ ছুঁয়ে,
ভোরের নোঙরে লাগে অন্তহীন হতাশা!
কত গোপন কথা পাতার কানে কানে
লে গ্যাছে সারাদিন__ক্লান্ত অস্তমেঘ
তালি-মারা মাচায় কাঁপে _ রুদ্ধআবেগ
ছেঁড়া-ফাঁড়া তাঁবুয় খুঁজি__স্বপ্নের মানে!

দাবদাহে পোড়া বনেজল ঢালে মেঘ
-নেক চাওয়ার পরে যাকে পেলাম
সেও চলে গ্যাছে দূরে...আবার ফিরবে;
এই আশায় খুলে রাখি আন্তর্জালের
দুয়ার-পাশকোড... স্বপ্নেরতরঙ্গের
ত্রস্ত অস্থিরতায় দুলে ওঠেদোলক__
.
১৪.০৭.১৯


নাফলা জমিনে জমা কত দুঃখরেখা!

কাদায় দেবে যেতো গরুগাড়ির চাকা
কলমের ডগায় বিপ্লবী গল্প ফেঁদে
বাড়ির বাহিরে;ভাত-শাক-কচু রেঁধে
দিন শেষে মনে হতো-সব ক্যান ফাঁকা?
বারান্দার বেঞ্চে পা ঝুলিয়ে বসে একা
তেমন কিছু নয় লাল মাটির টান
গোবর লেপা দেয়ালে অশ্রু বিন্দু-ঘ্রাণ
নাফলা জমিনে জমা কত দুঃখরেখা!

- বলবোনা __ সুপ্ত থাক্ছিটেফোঁটা
কাদাময় জীবন ঘেঁটে ছেঁড়া ছাতাটা,
বিকল তবু ঝুলিয়ে রেখেছি দেয়ালে...
নৃত্যঘরে আসি-যাই মনের খেয়ালে!
.
এখনো কাদায় সনাতন চাকা ঘোরে
ঘর্মাক্ত শব্দেরা ঝরে ফিসফাস সুরে...

.
১৬.০৭.১৯

ভাসমান প্রমোদতরী আন্তর্জাল এক!
.
আন্তর্জালে বুনে হলুদ-রসুন-ধান
অনেকে এখন! নেট যেন ভাসমান
প্রমোদতরী...চতুর মাছের ম্যাজিক,
মেঘে বিজ্ঞাপন দিয়ে জল চিক্‌চিক!

অবিরল ধারায় বৃষ্টি নামে... লাবণ্য
অস্ত-রাতেচাল ধোয়ানি জলের কল,
নেমে আসে অকস্মাৎ উগ্র বন্য ঢল,
দুঃসময়ের আঁচড়ে য়ে গ্যাছি শুন্য _
.
পাহাড়ের পাঁজর ছেঁড়া লক্ষ পাপড়ি
অজস্র লতাগুল্ম পুড়ছে রৌদ্রতেজে
আমার জলমগ্ন উঠোনে শিল্পতরু-
নষ্টনীড়! খুঁটে খায় ফল, টাকা-কড়ি

ধোঁয়া-অন্ধকার বিজ্ঞাপনঃ গ্রপে-পেজে
টুইটারে...ব্যস্ত কুশীলব ও সাঁতারু...
.
১৯.০৭.১৯


জলে ভেসে যায়_ চিংড়ি মাছের খামার
ফেরিঘাট। অ্যাপ ওন করে নদী খুঁজি ...
নদীর জলে আহত চাঁদ পড়ে আছে!
বার্চুয়াল দুনিয়া। নেটে সবাই বিজি
চে গেভারার চোখ এঁকে__পালক ভেঁজে !

হত্যাদৃশ্যে আধা-পোড়া চুরুট, আফিম
ব্লেডের আঁচড় লাগা বল্কলে কবিতা-
পপি ফুল। খেয়াল-গজল...রিমঝিম
দূরে সমুদ্র-গর্জন; ওধারে সুজাতা।
জলে ভেসে যায়_ চিংড়ি মাছের খামার
প্রোফাইলে উল্কি অঙ্কিত মৃত শামুক;
ইটকলের ধোঁয়ায় দূষণ ছড়ায়...
ব্যর্থ পংক্তি রচে মৃত কাঠের ছুতার
এও এক উচ্চাঙ্গ রঙ্গিন থিয়েটার,
ছেড়ে যেতে চাই... তো, আরো এসে জড়ায়!
.
২০.০৭.১৯ 


একা ঘুরি
.
মেঘ থেকে পাতায়,পাতা থেকে পুকুরে
একান্ত একা হয়ে থাকা গোধূলি রাগে
বৃষ্টি ফোঁটা পড়ার শব্দ ক্রমশঃ বাড়ে,
ঝোড়ো শব্দের ঝাপট-খেয়ে একা  লাগে!
কবিতা-শব্দ-গানে ঘোর নেশার ঝোঁকে
অহেতুক তন্দ্রাবিলাসী_ধ্যানী তাপস,
মিথ্যে গল্পের পিছু ক্ষয় করি বয়স
এক টুকরো রঙ...মৃত মাছের ঝাঁকে
রেখে আসি। আশ্বিনে শুভ্র কাশফুলের
দীপ্তি ছড়ানো জলে গর্ভিনী সাদাপুঁটি
কবিতা পড়ে ...জলে ছড়ায় ভুরভুরি,
সন্তরণপটু মন ডুবে আঁধারের
কুয়োতলায়, ভাসে হারানো বাঁশচটি
শুন্য আকাশে উড়িয়ে ঘুড়ি__একা ঘুরি...
.
২৩.০৭.১৯ 

একুরিয়াম

খাঁচাখুঁচি করে কমে যাচ্ছে সীমাবদ্ধ
আয়ু।গিরিগুহা ঘেঁষে প্রবাল পাথর
অতলে গণ্ডগ্রাম...কত  গিরিকন্দর...
ভাসমান নীল মসলিন...! অবরুদ্ধ
জলেও শিল্প করে বুনন পটু মাছ!
 ঝিনুক-মুক্তা-মাছে ভরা একুরিয়াম
ভুরভুরি ওঠা জলের নাচে উদ্দাম-

বন্দি। চারিদিকে প্রবাল প্রাচীর, কাচ...!

মেকি দুনিয়ায় সাঁতরে খা ডিগবাজি
কত রঙের রঙ্গিমা দ্যাখায় বনসাই
ঘরের কোণে..., জব্দ ও বন্দি ; শোভাময়
কাগজের এক টুকরো নৌকোর মাঝি ,
সমুদ্রের বালুকণায় যত লাফাই_
জীবন এর চাইতে বড়ো কিছু নয়
.
২৬.০৭.১৯

জলে চিলের ছায়া

ধূলাঢাকা অন্ধকারে ভাবের তরঙ্গ
ঘোরাফেরা করে বিক্ষিপ্ত ত্রস্ত ভঙ্গিতে
কত কিছুই বলতে চায় অকপটে;
ফেনিল জলবিম্বে উড়ে কত পতঙ্গ!
জলে চিলের ছায়া মিলিয়ে যায় দ্রুত
রুদ্ধস্রোত। অলকানন্দা  পুষ্প কথন
সব বৃথা আবর্জনা... ঊষর ফলন
দাম্ভিক পদচিহ্ন মুছে নিভৃতে-মৃত!
.
রুদ্ধস্রোত। অলকানন্দা  পুষ্প কথন
সব বৃথা আবর্জনা... ঊষর ফলন,
অনুপম শিল্প-মাধুরী __উচ্ছিষ্ট প্রেমে
রিক্ত আকাশ, বাঙ্ময় মেঘে ওঠে ঘেমে,

-নিঃস্ব, দুরাশা ভরা জলে... চিল উড়ে
ছায়া ফেলে_ সাদা-খয়েরি পালক ঝেড়ে ...
.
০১.০৮.১৯



জ্বলে যাওয়া সেই ফুলগুলি ভুলগুলি

মুখে অবাঞ্ছিত ভ্রুণ; দাগ পড়ে ত্বকে
অফ-ফর্মে আছি_ রক্ত লেগে আছে নখে,
মেঘ ধোঁয়ায় আকাশ কালো, জল ঝরে
কাটা আঙ্গুলটা__! থেকে থেকে মনে পড়ে।
জলের ধারে বনের ধারে সূর্য ডোবা
দ্যাখি, থেঁতো জলে রূপা নদীর কী শোভা! 
প্রেমে পড়ি, চিঠি লিখি, জলেতে ভাসাই
সব ব্যর্থ শেষে এখন উড়াই ছাই!
.
এখন শুধু মুগ্ধ করে ঠোঁটের ধোঁয়া
অক্ষর ভোলা গোধূলি বেলায় অস্থির
চেয়ে থাকা। বনস্থলী-- অন্তরালে বন!
বৃক্ষবাসী হরিয়াল দেয় মেঘ ছোঁয়া
উড়াল। স্থির গর্তে সজারু চোখ মুখ

জ্বলে যাওয়া সেই ফুলগুলি ভুলগুলি... 
.
০৫.০৮.১৯


দেখা হয়ে যায় পথবাতি জ্বলা সড়কে


সতেরো বছর পরআমাদের দেখা
চিনতে পারছিলে কীবিস্ময়ে তাকিয়ে
রইলেআমি ঠিকই তোমাকে চিনেছি
দ্যাখার সাথে সাথেযদিও নাম মনে
পড়ছিলো নাসতেরো বছরখুব কী
দীর্ঘ সময়মনে হয়এই সেদিন
সোনালি চুলসানগ্লাস পরা বিকেলে
সরু জঙ্গুলে পথে বাড়ি ফিরছো তুমি-

পৃথিবীটা গোল লেই চলতে পথে
দ্যাখা হয়ে যায়ক্যামন আছো,ভালো তো?
জিজ্ঞাসু চাহনি ছুড়ে দিয়েফিরে আসি
বৃষ্টিভেজা বালুময় পথ ভেঙে ভেঙে
পথবাতি জ্বলা সড়কেবিচ্ছিন্ন স্মৃতি
তাড়া করতে করতেডাইরিটা খুলে...

..১৬



  

No comments:

Post a Comment