গুপ্তধন




গুপ্তধন
-বচন নকরেক
কোন এক গ্রামে থাকত এক লৌহ কামার। সে দা, কুড়াল, কোদালসহ গৃহস্থালির প্রয়োজনীয় জিনিস তৈরী করে বিক্রি করত।
নিপুণ কারিগরি জ্ঞানের জন্য তার খ্যাতি ছিল সবখানে। আর সবাই তাকেই স্মরণ করত।

দূর গ্রাম থেকে দা বানানোর জন্য লোহা আর কয়লা নিয়ে এক ব্যক্তি এলেন তার কাছে। একটু অপেক্ষা করুন।কামার বললেন লোকটিকে। বসে অপেক্ষারত অবস্থাতেই ঝিমুতে ঝিমুতে ঘুমিয়ে পড়লেন লোকটি। ঘুমন্ত লোকটির নাক থেকে একটি চেলা’ (বহু পদ সরিসৃপ) বের হয়ে এল। চেলাটি ঘুমন্ত লোকটির শরীর বেয়ে নেমে চাড়ির (মাটির পাত্র) কিনার বরাবর হেঁটে একটি তুলসী গাছের উপর উঠে বসল। প্রতি ডালে ডালে ঘুরে মগডালে চড়ে এদিক-ওদিক তাকিয়ে তাকিয়ে দেখল। এরপর তুলসী গাছ থেকে নেমে চাড়ির জল সাঁতরে এসে ঘুমন্ত মানুষটির শরীর বেয়ে নাকের ভেতর ঢুকে গেল। লৌহ কামার কাজ ভুলে সবকিছু মন দিয়ে খেয়াল করছিল।

চেলা লোকটির নাকে ঢুকে যাবার পর লোকটিও আড়মোড়া ভেঙে জেগে উঠল। জেগেই লৌহ কামারকে বলল, ‘বাপরে। খুব ঘুমালাম তো। স্বপ্নও দেখলাম বেশ।’ ‘তা কি কি স্বপ্ন দেখলে তুমি ?’ লৌহ কামার জানতে চাইল। স্বপ্নে আমি কোন এক বড়ো পুকুরের কিনার বরাবর হাঁটতে হাঁটতে সে পুকুর সাঁতরে ডাঙ্গায় গিয়ে একটি বটগাছ দেখলাম। তারপর বটগাছে উঠে প্রতি শাখায় শাখায় ঘুরে বেড়ালাম। আর মগডালে চড়ে উঁকিঝুঁকি মেরে দেখলাম, পুকুরের স-ব জল স্বচ্ছভাবে দেখতে পাচ্ছিলাম বলে খুবই ভালো লাগছিল আমার। আমার তো আর ফিরতেই ইচ্ছে করছিল না। এভাবে সব দেখে আবার নেমে এলাম। সেই একই রাস্তায় ফিরে সেই পুকুরই সাঁতরে ঘরে পৌঁছামাত্রই আমারো ঘুম ভেঙে গেল। সে সবের অবস্থান কোথায় যে হবে বুঝতেই পারছি না। সেই বটের নিচেই এক চুঙ্গাঁ স্বর্ণমুদ্রা পুঁতে রাখা আছে বলে স্বপ্নেই এক ব্যক্তি বলেছিল। কী বলব, তুমি তা তুলে নিও-বলেও বলেছিল লোকটি। কোত্থেকে আর খুঁজে তুলে নেব। জায়গাটিইতো আঁচ করতে পারছি না।লৌহ কামারকে বলল লোকটি। কামার লোকটার কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনে নিল। আর খুব খুশী হলো।
এরপর তাড়াহুড়ো করে দা বানিয়ে দিয়ে লোকটিকে বিদায় করে দিল। এমনকি লোকটার কাছ থেকে মজুরিও রাখল নালোকটিও ধারালো দা পেয়ে খুশি হয়ে বাড়ি ফিরে গেল।
এলাকা জনশুন্য আর অন্ধকার হয়ে এলে পর লৌহকামার কোদাল দিয়ে তুলসীতলা কুপিয়ে দেখল। এবং সত্যি সত্যি এক চুঙ্গাঁ স্বর্ণমুদ্রা পেল। কামার তো খুশিতে আত্মহারা। সে তার গুপ্তধন পাবার কথাটি স্ত্রী-পুত্রকেও জানাল না। আর ঐ বেচারা স্বপ্নাদিষ্ট লোকটা তো কিছুই জানতে পারল না।


No comments:

Post a Comment