২০০ টি হাইকু/সেনরো ।। বচন নকরেক


২০০ টি হাইকু/সেনরো ।। বচন নকরেক

হাইকু প্রসঙ্গ

হাইকু হচ্ছে পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম জাপানি কবিতা। একে অণুকবিতা বলা যায়। তিনটি পংক্তিতে যথাক্রমে ৫,৭,৫ জাপানি শ্বাসাঘাতে মোট ১৭ মোরাসের সংক্ষিপ্ত পরিসরে একটি মুহূর্তে ঘটিত মনের ভাব প্রকাশ করা হয়। জাপানি হাইকু একটি লাইনে লিখিত হয়। সেই বাক্যটিতে ১৭টি মোরাস থাকে। সাধারণত একটি ইমেজ কল্পনা করে তা বর্ণনা করার জন্য হাইকু লিখিত হয়। ইউরোপিয়গণ ১৭ মোরাসকে ১৭ দল মনে করে হাইকু লেখার সূত্রপাত করে। তাদের দেখাদেখি বাংলা ভাষায় ১৭ মাত্রার হাইকু লেখার প্রচলন হয়। মোরাস, দল ও মাত্রা এক-একটি ভাষার নিজস্ব শ্বাস অনুসারী। ইউরোপে ইমেজিস্ট আন্দোলনের পর ১৭ সিলেবলের পরিবর্তে আরো বেশী সিলেবলের হাইকু লেখা শুরু হয়েছে। জ্যাক কেরুয়াক প্রমুখ মার্কিন কবিগণ স্বীকার করেছেন যে মার্কিন উচ্চারণ জাপানি উচ্চারণ হইতে সম্পূর্ণ পৃথক। তাঁরা ১৭ দল ও তিন বাক্য্ বন্ধন অস্বীকার করে হাইকু লিখেছেন।

বাংলা ভাষাভাষী হাইকু লিখিয়েরাও যে যার মতো করে লিখছে। কেউ স্বরবৃত্ত ছন্দে , কেউ মাত্রা বৃত্ত ছন্দে , কেউ অক্ষরবৃত্ত ছন্দে। বাংলা ভাষায় এমন কেউ নেই যাকে হাইকু লেখার আদর্শ বলা যেতে পারে।
হাইকু হল জাপানি বড় কবিতার ক্ষুদ্রতম রূপ! মূলতঃ রেঙ্গা বা তানাকা কবিতা হতে হাইকু কবিতার উদ্ভব। 'রেঙ্গা' বা তানাকা কবিতা ৫-৭-৫-৭-৭ মোরাসে মোট পাঁচটি ছোট লাইনে লেখা হত।
জাপানের 'Heian Period' ( ৭৯৪ – ১১৮৫ ) থেকে 'রেঙ্গা' কবিতা বিভিন্ন কবি ও রাজদরবারে উপস্থিত অভিজাতব্যক্তিত্ববর্গ রেঙ্গা বা 'তানকা' কবিতার প্রবর্তণ করেন। সেই কবিতাগুলো ছিল হাস্যরসাত্বক এবং তাতে কিছুটা নিম্নমানের শীল্পবোধ ছিল। তবে এই ধরণের কবিতাগুলো বেশ জনপ্রিয় ও আনন্দজনক ছিল। রাজদরবারে উপস্থিত ব্যাক্তিবর্গকে মজা দিতেই এ ধরণের কবিতা লিখিত হত। সে যাই হোক, ক্রমাগত কবিতার বিবর্তনে সেই রেঙ্গা বা তানকা বা ওয়াকা কবিতা থেকেই হাইকু কবিতা হয়েছে মাৎচুঅ বাশো-র ( ১৬৪৪ – ১৬৯৪ ) হাত ধরে। তিনি 'তানকা' বা 'রেঙ্গা' কবিতা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা করে ৫-৭-৫ মোরাসে নতুন ধরনের ক্ষুদ্র কবিতার প্রচলন করেন ! তারপরে Masaoka Shiki (১৮৬৭ – ১৯০২ ) বাশোর কবিতার নতুন নামকরণ করে এবং 'হাইকু' নামে এর প্রচলন করেন!

জাপানের বর্তমান জেনারেশন শুধু হিরাগানা অক্ষরে ৫-৭-৫ গুনেই হাইকু লিখেন। আর এই হিরাগানা অক্ষরের শব্দকেই "অনজি” বলা হয় ! তারা বলেন শব্দের rythom মিলিয়ে লিখলেই চলবে।

পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় চমৎকার সব হাইকু রচিত হলেও বাংলা ভাষায় হাইকু হয়নি খুব বেশি। এত অল্প কথায় মনের ভাব প্রকাশ করা যায় না মনে করে অনেক কবি হাইকু লেখা শুরু করেও পরে আর এ পথে এগুন নি। বাংলায় হাইকুর প্রসার না ঘটার অন্যতম কারণ, এর কঠোর নিয়ম ও অতিসংক্ষিপ্ততা। মাত্র তিনলাইনে ১৭ মাত্রায় মনের ভাবের জানালাটি ঠিক মতো তৈরী করা যায় না অনেকেই তা মনে করেন।

বাংলা ভাষায় শুদ্ধ হাইকু রচনা করা কঠিন। অক্ষর বৃত্ত ছন্দে আমার লিখিত এই ক্ষুদ্র জাতের কবিতাগুলোকে আমি শুদ্ধ হাইকু বলে দাবি করছি না। ২-১ টি হয়েছে , কোনটি সেনরো হয়েছে, কোনটি হয়তো জাস্ট ৩ লাইনের ক্ষুদ্র / অণু কবিতা হয়েছে।




২০০ হাইকু/সেনরো

(১)

বৃষ্টির দিনে

পড়ল তাকে মনে

ঝরল বারি

(২)

কোথায় যাব?

জলাবদ্ধ উঠোন

নৌকোটি নেই...

(৩)

একাই থাকি

স্মৃতিখানা আগলে

মেঘের খামে

(৪)

সব হারাল

পুরানো চিঠি, গল্প

গেল হেমন্তে

(৫)
সুরার পদ্য

নাচঘরে সলমা

আলোর কুঁচি
পরের পৃষ্ঠা...
1 2 3