২০০ টি হাইকু/সেনরো ।। বচন নকরেক
হাইকু প্রসঙ্গ
হাইকু হচ্ছে পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম জাপানি কবিতা। একে অণুকবিতা বলা যায়। তিনটি পংক্তিতে যথাক্রমে ৫,৭,৫ জাপানি শ্বাসাঘাতে মোট ১৭ মোরাসের সংক্ষিপ্ত পরিসরে একটি মুহূর্তে ঘটিত মনের ভাব প্রকাশ করা হয়। জাপানি হাইকু একটি লাইনে লিখিত হয়। সেই বাক্যটিতে ১৭টি মোরাস থাকে। সাধারণত একটি ইমেজ কল্পনা করে তা বর্ণনা করার জন্য হাইকু লিখিত হয়। ইউরোপিয়গণ ১৭ মোরাসকে ১৭ দল মনে করে হাইকু লেখার সূত্রপাত করে। তাদের দেখাদেখি বাংলা ভাষায় ১৭ মাত্রার হাইকু লেখার প্রচলন হয়। মোরাস, দল ও মাত্রা এক-একটি ভাষার নিজস্ব শ্বাস অনুসারী। ইউরোপে ইমেজিস্ট আন্দোলনের পর ১৭ সিলেবলের পরিবর্তে আরো বেশী সিলেবলের হাইকু লেখা শুরু হয়েছে। জ্যাক কেরুয়াক প্রমুখ মার্কিন কবিগণ স্বীকার করেছেন যে মার্কিন উচ্চারণ জাপানি উচ্চারণ হইতে সম্পূর্ণ পৃথক। তাঁরা ১৭ দল ও তিন বাক্য্ বন্ধন অস্বীকার করে হাইকু লিখেছেন।
বাংলা ভাষাভাষী হাইকু লিখিয়েরাও যে যার মতো করে লিখছে। কেউ স্বরবৃত্ত ছন্দে , কেউ মাত্রা বৃত্ত ছন্দে , কেউ অক্ষরবৃত্ত ছন্দে। বাংলা ভাষায় এমন কেউ নেই যাকে হাইকু লেখার আদর্শ বলা যেতে পারে।
হাইকু হল জাপানি বড় কবিতার ক্ষুদ্রতম রূপ! মূলতঃ রেঙ্গা বা তানাকা কবিতা হতে হাইকু কবিতার উদ্ভব। 'রেঙ্গা' বা তানাকা কবিতা ৫-৭-৫-৭-৭ মোরাসে মোট পাঁচটি ছোট লাইনে লেখা হত।
জাপানের 'Heian Period' ( ৭৯৪ – ১১৮৫ ) থেকে 'রেঙ্গা' কবিতা বিভিন্ন কবি ও রাজদরবারে উপস্থিত অভিজাতব্যক্তিত্ববর্গ রেঙ্গা বা 'তানকা' কবিতার প্রবর্তণ করেন। সেই কবিতাগুলো ছিল হাস্যরসাত্বক এবং তাতে কিছুটা নিম্নমানের শীল্পবোধ ছিল। তবে এই ধরণের কবিতাগুলো বেশ জনপ্রিয় ও আনন্দজনক ছিল। রাজদরবারে উপস্থিত ব্যাক্তিবর্গকে মজা দিতেই এ ধরণের কবিতা লিখিত হত। সে যাই হোক, ক্রমাগত কবিতার বিবর্তনে সেই রেঙ্গা বা তানকা বা ওয়াকা কবিতা থেকেই হাইকু কবিতা হয়েছে মাৎচুঅ বাশো-র ( ১৬৪৪ – ১৬৯৪ ) হাত ধরে। তিনি 'তানকা' বা 'রেঙ্গা' কবিতা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা করে ৫-৭-৫ মোরাসে নতুন ধরনের ক্ষুদ্র কবিতার প্রচলন করেন ! তারপরে Masaoka Shiki (১৮৬৭ – ১৯০২ ) বাশোর কবিতার নতুন নামকরণ করে এবং 'হাইকু' নামে এর প্রচলন করেন!
জাপানের বর্তমান জেনারেশন শুধু হিরাগানা অক্ষরে ৫-৭-৫ গুনেই হাইকু লিখেন। আর এই হিরাগানা অক্ষরের শব্দকেই "অনজি” বলা হয় ! তারা বলেন শব্দের rythom মিলিয়ে লিখলেই চলবে।
পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় চমৎকার সব হাইকু রচিত হলেও বাংলা ভাষায় হাইকু হয়নি খুব বেশি। এত অল্প কথায় মনের ভাব প্রকাশ করা যায় না মনে করে অনেক কবি হাইকু লেখা শুরু করেও পরে আর এ পথে এগুন নি। বাংলায় হাইকুর প্রসার না ঘটার অন্যতম কারণ, এর কঠোর নিয়ম ও অতিসংক্ষিপ্ততা। মাত্র তিনলাইনে ১৭ মাত্রায় মনের ভাবের জানালাটি ঠিক মতো তৈরী করা যায় না অনেকেই তা মনে করেন।
বাংলা ভাষায় শুদ্ধ হাইকু রচনা করা কঠিন। অক্ষর বৃত্ত ছন্দে আমার লিখিত এই ক্ষুদ্র জাতের কবিতাগুলোকে আমি শুদ্ধ হাইকু বলে দাবি করছি না। ২-১ টি হয়েছে , কোনটি সেনরো হয়েছে, কোনটি হয়তো জাস্ট ৩ লাইনের ক্ষুদ্র / অণু কবিতা হয়েছে।
২০০ হাইকু/সেনরো
(১)
বৃষ্টির দিনে
পড়ল তাকে মনে
ঝরল বারি
(২)
কোথায় যাব?
জলাবদ্ধ উঠোন
নৌকোটি নেই...
(৩)
একাই থাকি
স্মৃতিখানা আগলে
মেঘের খামে
(৪)
সব হারাল
পুরানো চিঠি, গল্প
গেল হেমন্তে
(৫)
সুরার পদ্য
নাচঘরে সলমা
আলোর কুঁচি
(৬)
সলমা জরি
রূপোর তারে বোনা
শিশির বিন্দু
(৭)
চায়ের কাপে
আস্ত এক জোছনা
তোমার মুখ
(৮)
মৃত কুকুর
শেয়ালেরা ঘুরছে
মাছির পাশে
(৯)
বাতাসে নড়ে
ফ্রেমে বাঁধানো ছবি
বাবার মুখ
(১০)
ঝুলন্ত সূতো
বৃষ্টিতে ভেজা ঘুড়ি
নিঃস্ব বালক
(১১)
নিরব সন্ধ্যা
ভাঁটফুলে জোনাকি
ফাটলে ব্যাঙ
(১২)
স্বর্গটা কই
দুলুনি ওঠে বুকে
কম্পিত মই ..
(১৩)
ফেরেস্তা নই
এক পেয়ালা পাপে
নরক কিনি
(১৪)
ব্যাঙের ছাতায়
এক আষাঢ় বৃষ্টি
ভরা পুকুর
(১৫)
মেঘলা দিন
শীত শীত প্রহর
খুঁজি উষ্ণতা
(১৬)
উদ্দাম ঢেউ,
হেসে খেলেই যাই;
স্বল্পায়ু প্রাণ..
(১৭)
আকাশে চাঁদ,
যেন খোলা জানালা;
মন উতলা...
(১৮)
নদীর বাঁক,
যাবে কোথা ! দ্বিধায়;
নিঃসঙ্গ কাক...
(১৯)
বাঁচার ছন্দ,
ভাঙে গুয়ার ঢেউ;
নেই কি কেউ?
(২০)
বন্ধা মৃত্তিকা
শব্দ চাষীর হাল
শুন্য মরাই
.
(২১)
বিস্তীর্ণ জলে,
কচুরিপানা হয়ে;
আবার ফিরি...
(২২)
গুহার দ্বার
পাথরে বাঁধা সিঁড়ি
কুয়াশা মোড়া
(২৩)
গভীর রাতে
কবরে শুতে যায়
উলঙ্গ শিশু
(২৪)
চুলার ছাই
ধ্বংশ করতে পারে
জন অরণ্য
(২৫)
প্রথম প্রেম
উড়ন্ত প্রজাপতি
পরাগ রেনু
(২৬)
পাহাড়ে ঝড়
ছিঁড়ে মেঘের পর্দা
ভাঙে বর্ষাতি
(২৭)
কাঁঠাল রোঁয়া
মিষ্টি গন্ধ ছড়ায়
পেটে আনন্দ
(২৮)
সাপের ফণা
আনারস পাতায়
বেহাত জমি
(২৯)
বাকল চিত্র
অশ্রুসজল নারী
অনবয়বে
(৩০)
তোমার ছায়া
গভীরে ডোবে থাকে
যায়না ছোঁয়া
(৩১)
উল্টানো বৃক্ষ
ধুলায় ঝুঁকে পড়ে
কাঠগোলাপ
(৩২)
ফাটলে সাপ
নিরাপদ আবাস
লুকানো মুখ
(৩৩)
কাচের গাছ
জলে মোড়ানো দেহ
কাঁদছে একা
(৩৪)
বৃক্ষ কর্তন
কষ ঝরার শব্দ
মৃত্যু যাতনা
(৩৫)
বন্ধা মৃত্তিকা
অনাবাদী খেতের
অপুষ্ট পদ্য
(৩৬)
চেনা মুখটা
মনে পড়ল কেন?
আকাশে বৃষ্টি
(৩৭)
পালকে কষ
কষ গললে বৃষ্টি
বুকে শ্রাবণ
(৩৮)
প্রাচীন বৃক্ষ
নিচে বাতিল কথা
উড়ছে বেগে...
(৩৯)
শিকড়ে ক্ষুধা
আতর গন্ধে মুগ্ধ
সুখ বিলাস
(৪০)
দৌড়ুচ্ছে নৌকো
মাঝি, আর কত রে-
ভাঙা নৌকো যে...
(৪১)
বন-পাহাড়ে
পাতা ঝরার গান
মর্মরে কান্না
(৪২)
নিষ্ফলা জমি
আইলের শামুক
আর ফিরেনি...
(৪৩)
নিষ্পত্র বৃক্ষ
পাখি নেই...নিস্তব্ধ
কান্না আসছে-
(৪৪)
বাঁশের বাঁশি
রাত দুপুরে বাজে
আমারি ঠোঁতে
(৪৫)
বগলে সেন্ট
আতর গলা ভোর
গন্ধ মাতাল
(৪৬)
ঐ চন্দ্রপ্রভা
জল আয়না মুখ
তোমার মতো...
(৪৭)
বিস্তীর্ণ বিল
জল উল্লোলে দোলে
মাটির গুহা-
(৪৮)
পিদিম জ্বলে
ভাবোদ্বেল সন্ধ্যায়
নিদয় তন্দ্রা...
(৪৯)
পুষ্পিত বন
প্রোথিত স্বপ্ন জাগে
লব্ধ পুরাণ...
(৫০)
শৈত্য প্রবাহ
পাতারা নাচে-দোলে
কী যেন ভেবে..
(৫১)
যেতে চাইনা
তবু যাবার তারা
দোয়ারে কড়া...
(৫২)
শন্য এ বুক
আরণ্যক বেদনা
পোড়া এ মুখ...
(৫৩)
আলসে রোদ
ছিলাম তো আমিও
বাড়িয়ে মুখ...
(৫৪)
ন্যাড়া পাহাড়
ব্রা পরা স্তন যেন
কুয়াশা মোড়া
(৫৫)
দুষ্টু চাহনি
শিশিরে রোদ হাসি
পুলক জাগে
(৫৬)
মজেই আছি
ঠোঁটের অন্ধকারে
গিলাস টেনে...
(৫৭)
পকেটে কষ্ট
তবু দিলে যখন
রেখে দিলাম...
(৫৮)
জলের ত্বকে
লেগেছে উষ্ণ রোদ
বাষ্পীয় মেঘ
(৫৯)
জলনূপুর
বাজে ছলাৎ ছল
হাওর জলে-
(৬০)
গলুই নাচে
ঢেউয়ের ধাক্কায়
ঝিমুয় মাঝি
(৬১)
ক্রৌঞ্চ মিথুন
জলচূড়ির শব্ধে
নাচে তা-ধি-ন
(৬২)
কাঁধে জোঁয়াল
কাঁদে গোঁয়ার ষাঁড়
মাথায় ঋণ
(৬৩)
ফিরোজা সন্ধ্যা
বেসামাল আবেগ
জ্বলন্ত চিতা
(৬৪)
জোছনা নিশি
কুয়াশা ভেজা মেঘ
লুপ্ত আবেগ
(৬৫)
বুনো পায়রা
পরের চালে থাকে
গানও গায়
(৬৬)
বীজের চোখ
অবগুন্ঠন ভাঙে
স্বর্গ দখলে
(৬৭)
ভাবুক কাক
ল্যাম্পপোস্টে ঝিমুচ্ছে
বাদল দিনে...
(৬৮)
নিভৃতে থাকি
অনেকদিন গান
শুনি না তমা...
(৬৯)
শামুক শীত
গভীর শালবনে;
ঘুম আসে না...
(৭০)
রাত্রির খামে
ঐ শীতের অরণ্য
হারানো চিঠি
(৭১)
ভেলকি বাজি
হাত সাফাই জাদু
বলি ম্যাজিক..
(৭২)
সুর লহরি
সাঁটানো হিউমাসে
জ্যোস্না প্রভায়-
(৭৩)
কষ্ট কবিতা
আগুন পেলে নাচে
পোড়া ফড়িং...
(৭৪)
নির্লীপ্ত কবি
উড়ে কত জোনাকি
মুগ্ধ করে না
(৭৫)
শ্রাবণ দাহ
স্তব্ধ পুকুর পাড়,
কদলী পাতা
(৭৬)
.
একাকী সন্ধ্যা
শিঙ গজানো কাশ
সফেন চরে...
(৭৭)
.
শুকনো ডোবা
মুখ থুবড়ে আছে
পদ্ম শারদ
(৭৮)
.
ভোরের দৃশ্যঃ
জল সেঁচা হাওর
লাফায় পুঁটি
(৭৯)
.
লোহার হাড়
পেটালে বেঁকে যায়
মাটির ফুল
(৮০)
.
পুরানো রাস্তা
শ্যাওলা জমা বট
গুমসো গুহা
(৮১)
.
ছনের চাল
বনদস্যুর খুপড়ি
করাতকল
(৮২)
জলের নাভি
কুমিরের সাঁতার
প্রসব ব্যাথা
(৮৩)
.
ঢেউয়ে চড়ে
পিঁপড়ে ফিরে যায়
শ্বশুর বাড়ি
(৮৪)
.
ঘর্মাক্ত মেঘ
ঝড়জলে মুখর
মাঠ প্রান্তর
(৮৫)
.
পাহাড়ি ঢল
ভাসিয়ে নিয়ে যায়
আনন্দটুকু
(৮৬)
খালুই ভরি
ঝিনুক থেকে মুক্তা
পুকুর সেঁচে
.(৮৭)
রঙিন পাতা
শুকালে পেট-রোগা
শব্দ মুখর
(৮৮)
মায়ের দুধ
উৎফুল্ল বাছুরটি
নাচতে থাকে
.(৮৯)
বিরূপ ক্ষণ
ঢেউয়ের ধাক্কায়
মাচান দোলে
.(৯০)
ময়ূর নৃত্য
ধা ধি ধি না কত্থক
মুগ্ধ হরিণ
(৯১)
তীব্র গরম
উড়ো সাঁকোর নিচে
ক্লান্ত মানুষ
.
(৯২)
ঝড়ের পরে
একঝাঁক চড়ুই
বাসা পাল্টায়
(৯৩)
.
গর্তে গোখরা
ইঁদুরের ভোঁ-দৌড়
শারদ রাতে
(৯৪)
.
ঘামে ভিজছে
ন্যাকড়ার পুতুল
ছেঁড়া মুখোশ
(৯৫)
.
ঝুম বৃষ্টিতে
চিনা জোঁকের নাচ
ঘাস ডগায়
(৯৬)
অন্ধ জোনাকি
আগুন জ্বেলে উড়ে
লামা-পাহাড়ে
.(৯৭)
ভাঙা চশমা
কুড়িয়ে পাওয়া চিঠি
পড়া যাচ্ছে না
.(৯৮)
মৃত মাছিটি
হাতগুলো নাড়াচ্ছে
বাতাস পেয়ে
.(৯৯)
দূরের দৃশ্য
পুড়ে গেছে সবুজ
রুক্ষ পাহাড়
.(১০০)
হাঁড়ির গান
রাত বাড়লে বাজে
নেশারে ঘোরে
(১০১)
উন্মাদ নদী
জলঘুড়ির ঘূর্ণি
ভাসায় বাড়ি
.(১০২)
গভীর রাতে
পাখিসত্তার কান্না
জাগায় বন
.(১০৩)
নদীতে খই
বিষাদাক্রান্ত মেঘ
ফুল ফোটায়
(১০৪)
কপোত মাংস
পাদরা পাতা-রস
অনন্তমূল
.
(১০৫)
বটের কুঁড়ি
ঝড়ে ঝরে ধুলায়
কালবৈশাখে
(১০৬)
উদ্যানে বাতি
বাতাসে নিভু নিভু
আলোর খেলা
.
(১০৭)
.
তুষার দেশ
কাচে মোড়ানো গাছ
বরফাবৃত্ত
(১০৮)
কবির ঘরে
শব্দে শব্দে ঝগড়া
চৈত্রের ঝড়
(১০৯)
ঝাপসা রাত
উঠোনে সূর্যমূখী
শিশিরে চাঁদ
(১১০)
শিশিরকণা
রোদ পড়লে নেই
এতই ভয়
(১১১)
*
হিম সন্ধ্যায়
কথা বলা শালিক
রোদ পোহায়
(১১২)
এই দিনটা
শুকনা পাতা রঙ
তপ্ত বাতাস
(১১৩)
দূর দেশের
বরফ ঢাকা চাঁদ
আমাকে টানে
(১১৪)
প্রেমিক চায়
চেরি ফুলের ছোঁয়া
ফুটন্ত পদ্যে
(১১৫)
বিশুষ্ক ঠোঁট
মচমচা পাতায়
তোমাকে খুঁজি
(১১৬)
শীতের বৃষ্টি
ভিজছে কোট, ছাতা
ফেস টু ফেস
(১১৭)
দূর পাহাড়ে
রেখে আসা জীবন
উদাস করে
(১১৮)
কাঠগোলাপ
ডাকে, শাদা মায়ার
হাতছানিতে
(১১৯)
অপুষ্ট কুঁড়ি
বাতাসে ওড়ে সীসা
দিনদুপুরে
(১২০)
ঢেউয়ে ভাসে
জলের জলকেলি
বর্ষার গান
(১২১)
তরুণ তৃণ
বাতাসে নেচে হাসে
ঝড়ের পরে
(১২২)
গজল সন্ধ্যা
না খাওয়া বিকাল
তোমাকে ভেবে
(১২৩)
ভরা পূর্ণিমা
ফুটন্ত ফুলে চাঁদ
কবি উদাস
(১২৪)
আমার জন্য
ফুটেনি চেরি ফুল
কোন মাসেই
(১২৫)
ভেজা আশ্বিন
নৈঃশব্দ্যের ভিড়
ধুধু শুন্যতা
(১২৬)
গাঢ় আঁধার
ঠোঁটে বিষের বাঁশি
বেজেই যাচ্ছে
(১২৭)
পাহাড়-টিলা
ডাকছে গন্ধ ছেড়ে
নিমের ফুল
(১২৮)
গোলাপ হাতে
স্বর্গে ঘুরে বেড়ায়
মৃত বউটি
(১২৯)
শিশির ফোঁটা
রোদে ফুরিয়ে যায়
ফিরে সন্ধ্যায়
(১৩০)
গাঢ় আঁধার
কুয়াশা ঢাকা মুখ
পিছল মন
(১৩১)
ক্ষুধার্ত মাছি
ঘাম জমা পাতায়
নাড়ায় শুঁড়
(১৩২)
শিশিরকণা
কোমল দেহে তার
ভেজায় ঘাস
(১৩৩)
শুকনো দিন
চৈত্রে ফোটা ফুলটি
হারিয়ে যায়
(১৩৪)
মাটির মূর্তি
জলে ফেলে ডুবায়
দূর্গাপূজোয়
(১৩৫)
বিরহী মুখ
তপ্ত আগুনে রোদ
আশ্বিনে সন্ধ্যে
(১৩৬)
পুরনো দিন
কলসী কাঁখে তুমি
জলের শব্দ
(১৩৭)
সুগোল মুখ
কতদিন দেখি না
চৈতালি সুর
(১৩৮)
পথের বাঁক
দেহের ভঙ্গিমাটি
সর্পিল তরু
(১৩৯)
গাঢ় আঁধার
আমার হাতে জ্বলে
কাঁটার ফুল
(১৪০)
জোনাকি উড়ে
ধুলায় আলো ফেলে
নিঃশব্দ বেগে
(১৪১)
দেখবে এসো
শিশির নামে চুপে
হিম কার্তিকে
(১৪২)
সোনালি মাঠ
বাতাসে ঢেউ খেলে
ধানের গন্ধে
(১৪৩)
স্মৃতির ঢেউ
তুমি নেই তবুও
আছড়ে পড়ে
(১৪৪)
খেজুর পাতা
বাবুই কারিকুরি
দোলনা ঘর
(১৪৫)
খুচরো দিন
দলবেঁধে হঠাৎ
তোমার দ্বারে
(১৪৬)
শুকনো দিন
পাহাড়ে জুম খেত
ধোঁয়ায় ঢাকা
(১৪৭)
পাহাড় চূড়া
গড়িয়ে পড়ে নিচে
গলিত ছাই
(১৪৮)
মাচান ঘর
নিচে বন্য শুকর
হিংস্র দাঁতাল
(১৪৯)
জুম বাগান
শিমুল তুলো উড়ে
চৈত্র বাঁশিতে
(১৫০)
আকাশে ওড়ে
মনোহরী ফানুস
প্রবারণায়
(১৫১)
বাতাসে ওড়ে
ফিসফিসিয়ে কানে
প্রেম কথারা
(১৫২)
বাতাসে দুলে
খোঁপার চেরি ফুল
মত্ত সন্ধ্যায়
(১৫৩)
রোহিঙ্গা ক্যাম্প
উদ্বাস্তু নর নারী
ত্রাণের পণ্য
(১৫৪)
উঠোন জুড়ে
বাসি ফুলের গন্ধ
পেরেক পোঁতা
(১৫৫)
জলের কাচ
ভঙ্গুর মুখচ্ছবি
ঘাসেতে ঝরে
(১৫৬)
বৃষ্টি ও ছাতা
গল্প ক'রে কাটায়
ঝড়ের প'রে...
(১৫৭)
আড়ালে ঘুঘু
ছিপছিপে বর্ষার
গান শোনায়
.(১৫৮)
বন বাংলোয়
আতরের সুগন্ধ
চুলের গন্ধ
(১৫৯)
আগুন পান
ঠোঁটে পুরলে নিভে
গোলাপজান
(১৬০)
পাহাড়ি বন
ঝিঁঝিঁ গানে মুখর
উদাসী ক্ষণ...
(১৬১)
মাছির চুমু
রঙ্গীন করে গাল
ভ্যাপসা দিনে-
(১৬২)
নতুন ঘাসে
চঞ্চলা ঠোঁটে হাসে
চিত্রা হরিণী
(১৬৩)
জেগে উঠছে
দূরস্মৃত আবেগ
আম্র কাননে
(১৬৪)
হিম নৈঃশব্দ্যে
ভ্রমরের কূজন
রঙ মাখানো
(১৬৫)
নৃত্য ভঙ্গিমা
দু'ধারে চোখ ঘোরে
বন্য ময়ূরী
(১৬৬)
ভরা যৌবনা
পাতাটি ঝরে গেল
কালের গর্ভে..
(১৬৭)
চাঁদনী রাতে
অজস্র কষ্ট ঝরে
চুনিয়া পুলে
(১৬৮)
ডাকে দাদুরী
বসন্তে বর্ষা খেলা
মেঘ মেদুর
.(১৬৯)
প্যাঁচানো ত্যানা-
ধোঁয়া-সাদা পাহাড়ে
পাখিরা উড়ে
(১৭০)
বন্য মাধুরী
বনপোড়া হরিণী
মুগ্ধ বালিকা
(১৭১)
বরফ ভেজা
ছেঁড়া চিঠির ফাঁকে
তোমার চোখ..
(১৭২)
ভেজা অরণ্য
কুচি কুচি সোনারা
হাসছে রোদে
(১৭৩)
মেঘের ঘাম
বুকের ভেতর স্রোত
জমাট রক্ত
(১৭৪)
শুন্যে উড্ডীন
গৈরিক থ্রিডি মেঘ
পুঞ্জিত ধোঁয়া...
(১৭৫)
উজার বন
মাথা ন্যাড়া পাহাড়
বিপন্ন পশু
(১৭৬)
আগুনে মন
বারোমাসি ফোটায়
ধোঁয়াশা ফুল..
(১৭৭)
তোমার জন্য
কত শিউলি ঝ'রে
গেল, বোঝনি ...?.
(১৭৮)
পূর্ণিমা রাত
নিরব গোল নৃত্যে
জোছনা ফোঁটা
(১৭৯)
বৃষ্টি সন্ধ্যায়
টাওয়ারে শামুক
শিঙ নাড়াচ্ছে...
(১৮০)
জুমের জমি
বেহাত হয়ে গেলে
টুরিস্ট স্পট...
(১৮১)
চড়ুই বাসা
পাখা মেলে দেখায়
ডানার গতি
(১৮২)
হাওরে নৌকো
দেহ ঝলসে যায়
জলীয় তাপে
(১৮৩)
জলে তাকালে
নিজেকে ভাঙতে দেখি
অজস্র খণ্ডে ...
(১৮৪)
হাত নাড়ালে
হেমন্তে; ঢেউ ওঠে
ধানের শিষে...
(১৮৫)
কী যে সৌভাগ্য !
আমার যত কষ্ট
তুমিই নিলে...
.(১৮৬)
শীতের সন্ধ্যা
নদীর পিঠে চাঁদ
ঘুম। কী শান্ত!
(১৮৭)
রাত দুপুরে,
পুকুরে চাঁদ পড়ে
ধূপ ধোঁয়ায় ...
(১৮৮)
কে, ক্যান এলো ?
পিঠে বরফ বেঁধে
মুখোশ পরে...
(১৮৯)
টানা বৃষ্টিতে
সিঁড়ি বেয়ে শামুক
উঠছে ক্যান ?
(১৯০)
সন্ধ্যার পাতে
ডোরাকাটা কচ্ছপ
চিংড়ি উধাও...
(১৯১)
নিম পাতা্র
ধূলা; ধুইয়ে দেয়
তুষার বিন্দু...
(১৯২)
নিঃশ্বাসে কষ্ট
আঁধারে প্রতিধ্বনি
জমাট কফ...
(১৯৩)
সাঁকোয় চাঁদ
পা ঝুলিয়ে আমিও
দুজনি একা-
(১৯৪)
ছাদে চা খাই
চায়ের কাপে চাঁদ
মুচকি হাসে...
(১৯৫)
মাচাং ঘরে
হরিণের শুঁটকি
পাখির হাড়-
(১৯৬)
পিঁপড়ে সারি
কাঁধে মদের ছিপি
উষ্ণতা পেতে
(১৯৭)
দেয়ালে জোঁক
রক্ত নেশায় বুঁদ
পিঠে লবণ...
(১৯৮)
বৃক্ষ কোটরে
সাপ আর নেউলে
ঘুমুচ্ছে মিলে...
(১৯৯)
রাক্ষুসে রাত
জোঁকের পিঠে চাঁদ
রক্তাক্ত ঠোঁট...
(২০০)
পালক গলে
হারিয়ে গেলে তুমি
বর্ণ প্রেমিক
পরের পৃষ্ঠা...