কেবিন নং-২০৪


কেবিন নং-২০৪



-বচন নকরেক

দোকানির সাথে সামান্য টাকা নিয়ে ঝগড়া বাঁধিয়ে দিয়েছে অরণ্য। সহ্য করতে না পেরে বিলাসি কাছে এসে বলল,-তুই পারিসও। নিবে না তো নোট বদলে দে। এই বলে নিজের পার্স থেকে ঝকঝকে দশ টাকার নোট বের করে দোকানিকে দিলো।
-চল, লেট হয়ে যাচ্ছে। বলে অরণ্যর হাত চেপে ধরে টেনে নিয়ে চলল।
- দাঁড়াও রিক্সা নিই।
-না,এইতো কাছেই। একটু হাঁটলেই হবে।কাঠ বোঝাই ট্রাক চাকা পাংচার হওয়ায় সরু রাস্তার এই ছোট শহরে দীর্ঘ যানজট হয়ে গেল। -রিক্সা, ব্যাটারির অটো রিক্সা, টেম্পু..উহ! এটা রিক্সার শহর বলে বিলাসির হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে পকেট থেকে কাগজে মোড়ানো সস্ মিষ্টি দেয়া পান মুখে পুড়ে চিবুতে চিবুতে গুটুর গুটুর করে বিলাসির পিছু পিছু হাঁটে অরণ্য আধ কিলো মতো হাঁটার পর ক্লিনিকে পৌঁছে যায় তারা।-দেখলে তো, পৌঁছে গেছি। রিক্সা নিলে ১৫ টাকা ভাড়া নিত। যানজটের জন্য অরো লেট হতো।
-হুম, বলে সায় দেয় অরন্য।

ক্লিনিকের নাম সেইফ এইড। কেবিন নং -২০৪ প্যাশেন্টের নাম সেফালি। অবশ্য অরণ্য জানে না রোগী কে, কার অপারেশন আছে আজ। স্কুল জীবন থেকে মহানায়কের মতো -ওর সাথে প্রেম করে অবশেষে সেবিকা বিলাসিকে বিয়ে করেছিল অরণ্য। রোগীর জন্য রক্ত প্রয়োজন পজেটিভ। অরণ্যর রক্তের গ্রুপের সাথে মিলে যাওয়ায় রক্ত দিয়ে সহযোগিতা করতে বিলাসির সাথ এসেছে সেও। সিড়ি ভেঙে উপরে -২০৪ নং কেবিনে ঢুকে যায় তারা। আরো এক ঘন্টা বাকি অপারেশনের জন্য রুমের ভিতর ব্রাম্ম্যপল্লী হোস্টেল থেকে আরো দুজন কলেজ ছাত্র এসে রক্ত দেয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। ফ্যাকাসে শীর্ণকায় সেফালিকে দেখে প্রথমে চিনতে পারেনি অরণ্য পরে ভালো করে আই কন্ট্যাক্ট হওয়ার পর চমকে যায় অরণ্য। বান্ধবী বিলাসীর স্বামীকে দেখে মৃদু হাসির রেখা ফুটে উঠে সেফালির ঠোঁটে।


-কাল তো এক ব্যাগ রক্ত দেয়ার পর না বলেই চলে এলে। রোগী কেমন আছে জানতে চাইলে না যে ? -কেমন আছে ?-অপারেশন সাকসেসফুল। আপাতত ভালো আছে। তবে আরো রক্ত দেয়া লাগবেবলে বিলাসি মেঝে ঝাড় দিতে গিয়ে কয়েকটি সেগারেটের ফুটকি দেখতে পায়।
-কি রে, তুই না সিগারেট খাওয়া অনেক আগে থেকেই ছেড়ে দিয়েছিলি। শুধু না একটা দুটা পান খেতি। তাহলে সিগারেট খেল কে? -আমি। এই বলে জি সিনেমায় অমিতাভ বচ্চনেরশোলেদেখায় মনোনিবেশ করে অরণ্য।
-কেন ? বিলাসির কেন- উত্তর না দিয়ে গাব্বার সিং রুপী আমজাদ খানের র্দুদান্ত অভিনয় উপভোগ করতে থাকে সে। উত্তর না পেয়ে বিলাসি বলে,-তোমরা আগে থেকেই একে অপরকে চিনতে না কি ? কিছুক্ষণ থেমে থেকে আবার কথা বলা শুরু করে,
-কি, কথা বলছো না যে ? তুমি না বললেও আমি জানি। বলে মুচকি হাসে বিলাসি। আর বলে,-কারণ, আমি আর সেফালি একই হোস্টেলে থাকতাম। তার সাথে চুটিয়ে প্রেম করার সময় তুমি তাকেসোনাবলে সম্বোধন করে র্দুদান্ত সব চিঠি লিখতে না- দুজনে মিলে আমরা সেসব পড়তাম কিন্তু কি জানো, তার জন্য আরো রক্ত দরকার
-রক্ত! রক্ত আরো দেব যদি লাগে কথাগুলো বলে টিভি বন্ধ করে দেয় অরণ্য। তিন মাস পর পর ব্লাড ব্যাঙ্কে নিয়মিত রক্ত দেয় সে মানবতাবোধ থেকে
-বাপরে ! সাবেক প্রেমিকাকে বাঁচাতে এতো উদ্বেগ তোমার এই বলে বিলাসি হাসে
-না, মা-নে---
-- যে বললাম না-আমি সব জানি রোগীটি সেফালি বলে তোমারই কেন বারবার রক্ত দিতে হবে শুনি ? যাও লাগবে না মেয়ে হোস্টেলে যোগাযোগ করেছি। এই ব্লাড গ্রুপের কিছু ছাত্রী তাকে রক্ত দিতে সম্মত হয়েছে তোমার ব্যাপারে সব জেনে, তোমার আবেগ, রাগ, অভিমান পুরনো - গল্প মেনেই তো তোমাকে গ্রহণ করেছি না কি! এত লুকানোর কোন প্রয়োজন নেই তোমার কষ্ট আমি বুঝতে পারি বিকেলে চল আবার আমার সাথে তোমার সোনাকে কাছ থেকে দেখতে পাবি এই বলে বিলাসি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে আর মনে মনে বলে, বেচারা সেফালি স্বামী হারুনও মরে গেল দুরারোগ্য এইডসে আক্রান্ত হয়ে আর সেফালি, তার নিজের হল ব্রেন টিউমার সফলভাবে অপারেশন হলেও এখনও আশঙখামুক্ত নয় সেফালি কেমন একটা ভালোলাগা ফুরফুরে মন নিয়ে গোছল করে অরণ্য শাওয়ারের পানি ছেড়ে দিয়ে রাধা রমণের গান গায়। বিকেলে পরে ২০৪ নং কেবিনে যাবার জন্য নিজের শার্ট, প্যান্ট নিজেই ভালো করে ধুয়ে তাড়াহুড়োয় শুকাতে দেয় ছুটির দিন তাই বিলাসিকে জড়িয়ে ধরে ঘুমায় ঘুমটা যখনই গাঢ় হতে যাচ্ছে তখনই বিলাসির ফোনটা বেজে উঠে অরণ্য উঠে গিয়ে কল রিসিভ করে সাথে সাথে ওপাশ থেকে কান্না জড়িত এক নারী কন্ঠ বলে উঠে, -বিলাসিদি, বিলাসিদি-সেফালি আর নেই এই মাত্র সেফালি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছে। তাড়াতড়ি চলে এসো ততক্ষণে বিলাসি উঠে বসেছে বিছানায় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা অরণ্যকে জিজ্ঞেস করে,
-কি হয়েছে ? দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চুলে আঙুল বুলাতে বুলাতে অরণ্য বলে,
-সো-না, সোনা আর নেই রে...


No comments:

Post a Comment